‘ধর ধর.., শাড়ি ছিঁড়ে দে...’
রাস্তা দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে শিক্ষিকারা কার্যত বাঁচতে চাইছেন। পেছনে তাদের দিকে তেড়ে আসছেন একদল নারী ও পুরুষ। শিক্ষিকাদের দিকে একনাগাড়ে ধেয়ে আসছে অশ্রাব্য গালিগালাজ। ওই দল থেকে এক যুবক চিৎকার করে বললেন, ‘কাউকে ছাড়ব না। ধর ওদের। টান, টান, শাড়ি ধরে টান।’ তার এ কথার পরই এক নারী পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়েন এক শিক্ষিকার ওপরে।
মঙ্গলবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের সামনে এভাবে হেনস্তার শিকার হন ওই নারী শিক্ষক। ওই নারী শিক্ষকের নাম শ্যামলীদেবী বলে জানা গেছে। শ্যামলীদেবী ছাড়াও এদিন রূপা ভট্টাচার্য নামে আর এক শিক্ষিকাকে শারীরিকভাবে হেনস্তার শিকার হন।
সম্প্রতি ওই স্কুলে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রাক-প্রাথমিকের এক ছাত্রীকে যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এদিন বিক্ষোভে ফেটে পড়েন অভিভাবকরা। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে মঙ্গলবার।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের টানাহেঁচড়ায় ওই নারী শিক্ষিকার ব্লাউজের একাংশ ছিঁড়ে যায়। এ সময় পাশের এক নারী বলতে থাকেন, ‘শাড়ি ছিঁড়ে দে ...শাড়ি ছিঁড়ে দে ওদের।’ রাস্তার মধ্যে কেউ ওই শিক্ষিকার কাপড় ধরে টান মারেন। কেউবা হাত ধরে টেনে মাটিতে ফেলার চেষ্টা করতে থাকেন। সেই সঙ্গে চলতে থাকে এলোপাথাড়ি চড়থাপ্পড়। পরে দুজন ছাত্রী এসে কোনোভাবে শ্যামলী চৌধুরীকে স্কুলের ভেতরে নিয়ে যায়। আতঙ্কে এ সময় কাঁদতে দেখা যায় তাকে।
স্কুলের শিক্ষিকাদের অভিযোগ, গালিগালাজ করা থেকে পোশাক ছিঁড়ে দেয়া, এমনকি স্কুল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি- কিছুই প্রায় বাদ রাখেননি মারমুখী অভিভাবকেরা। যদিও স্কুলশিক্ষা দফতর জানিয়েছে, বহু বহিরাগত ওই দলে এদিন ঢুকে পড়েছিল।
সম্প্রতি যাদবপুর বিদ্যাপীঠে ভর্তির বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য ভুল বুঝে প্রধান শিক্ষকের উদ্দেশে কটূক্তি করা ছাড়াও রাস্তা অবরোধ করেছিলেন অভিভাবকেরা। এবার সরাসরি শিক্ষিকাকে মারধরের ঘটনা ঘটল।
বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বলেন, ‘এটা ভাবতেই পারছি না। অভিভাবকদের যদি এই মূল্যবোধ হয়, তাহলে সন্তানেরা কী শিখবে?’
স্কুলশিক্ষা দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, ‘ঘটনাটি অমানবিক ও নিন্দনীয়। সন্তানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে বেদনা বা ক্ষোভ স্বাভাবিক। তাই বলে সেটার বহিঃপ্রকাশ কদর্য বা রুচির বিরোধী যেন না হয়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।’
এসআর/পিআর