ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ নারী সাংবাদিকের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৮:২৮ পিএম, ০৯ অক্টোবর ২০১৮

ভারতে 'হ্যাশট্যাগ মি টু' ক্যাম্পেনের জোয়ারে এবার অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এল দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য ও ভারতের ডাকসাইটে একজন সাবেক সম্পাদক এম জে আকবরের নাম।

মঙ্গলবার ভারতের সাংবাদিক প্রিয়া রামানি নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে আকবরের নাম উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট যৌন লাঞ্ছনার অভিযোগ এনেছেন।

তার টুইট সামনে আসার পর আরও বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এম জে আকবরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন।

jagonews

এর আগে সোমবার ফার্স্টপোস্ট নামে একটি পোর্টালেও নামকরা একজন সাবেক সম্পাদকের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার বিশদ বিবরণ প্রকাশ করা হয়েছিল একজন নারী সাংবাদিকের বয়ানে। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, সেখানেও অভিযুক্ত ব্যক্তি ছিলেন আকবর।

আকবরের নাম প্রকাশ্যে আসার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে প্রতিক্রিয়াও জানতে চাওয়া হয়েছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্বরাজের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পদেই এখন আছেন আকবর।

মঙ্গলবার সকালে একটি অনুষ্ঠানে সুষমা স্বরাজ যখন যোগ দিতে আসেন, তখন ট্রিবিউন গোষ্ঠীর সাংবাদিক স্মিতা শর্মা সরাসরি তার কাছে জানতে চান আকবরের বিরুদ্ধে কোনও তদন্ত করা হবে কি না।

তিনি বলেন, ম্যাডাম, অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে আপনার জুনিয়র মন্ত্রী এম জে আকবরের বিরুদ্ধে। আপনি নিজে একজন নারী, এখন এই অভিযোগের সাপেক্ষে কোনও ব্যবস্থা কি নেওয়া হবে?

কিন্তু এই প্রশ্নের জবাবে একটি শব্দও না-বলে হেঁটে চলে যান সুষমা স্বরাজ। তার প্রতিক্রিয়া থেকেই স্পষ্ট এই অভিযোগ সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলেছে এবং তারা আপাতত বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছেন।

jagonews

যেসব অভিযোগ এম জে আকবরের বিরুদ্ধে

প্রিয়া রামানি লিখেছেন কীভাবে মুম্বাইয়ে নিজের হোটেল কক্ষে ডেকে নিয়ে তার তখনকার সম্পাদক আকবর তার প্রতি যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণ করেছিলেন।

তার ভাষায়, সেদিন বুঝেছিলাম লেখক হিসেবে তিনি যতটা প্রতিভাবান, যৌন শিকারী হিসেবেও ততটাই। মিনিবার থেকে তিনি আমাকে ড্রিঙ্ক অফার করলেন, আমি না-বলার পর তিনি নিজে ভোডকা খেতে শুরু করলেন। তারপর জানালা দিয়ে মুম্বাইয়ের বিখ্যাত কুইনস নেকলেস দেখতে দেখতে তিনি আমায় পুরনো হিন্দি গান শোনাতে শুরু করলেন।

'হোটেলের ঘরের বিছানা ততক্ষণে রাতের মতো তৈরি করা হয়ে গেছে। একটু পরে নিজের পাশে ছোট্ট একটা জায়গা দেখিয়ে আমাকে বললেন, এখানে এসে বসো! আমি শুকনো হেসে বললাম, না। সেদিনের মতো রক্ষা পেলেও নিজের কাছে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আর কোনোদিন আপনার সঙ্গে একলা কোনো ঘরে কিছুতেই যাব না!'

যুগ পাল্টালেও এম জে আকবরের মতো সম্পাদকরা আজও একই রকম রয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রিয়া রামানি।

তার কথায়, এরা আজও মনে করেন প্রতি বছর যে নতুন ব্যাচের তরুণী মেয়েরা তার কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করছে, তাদের অনায়াসে বলা যায়, 'দ্যাখো, আমি শাওয়ার নিচ্ছি, একটু ম্যাসেজ দিতে পারো? কিংবা শোল্ডার রাব?, আমি আমার ব্লো জবের জন্য এখন তৈরি, তুমি কি বিবাহিত' এই সব!

প্রিয়া রামানি এম জে আকবরের নাম প্রকাশ করার কিছুক্ষণ পরই প্রেরণা সিং বিন্দ্রা নামে আরেক সাংবাদিক টুইটারে লেখেন কীভাবে তার সম্পাদক আকবরের প্রতি তার যাবতীয় শ্রদ্ধা চুরমার হয়ে গিয়েছিল।

'আমাদের পুরো ফিচার টিম নিয়ে যখন মিটিং হচ্ছে, তখনও তিনি সেখানে প্রকাশ্যেই যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতেন। মেয়েরা অনেকেই আমাকে বলেছিল, তাদের তিনি একা হোটেলের ঘরে দেখাও করতে বলেছেন বহুবার!'

'একবার মহারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটা স্টোরির জন্য গিয়েছিলাম, সেখানে এক কর্মকর্তা আমাকে জড়িয়ে ধরেন। যখন আমি অভিযোগ জানানোর কথা ভাবি, তখন মনে হল কার কাছে বলব - আমাদের সম্পাদক নিজেও তো একই ধাতুতে গড়া'-, লিখেছেন বিন্দ্রা।

সম্পাদক থেকে রাজনীতিক

পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার আদি বাসিন্দা এম জে আকবর ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত ও সুপরিচিত সাংবাদিকদের একজন। মাত্র ৩১ বছর বয়সে কলকাতা থেকে প্রকাশিত 'দ্য টেলিগ্রাফ' পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পান তিনি, নতুন ওই খবরের কাগজটিকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোর কৃতিত্ব অনেকটাই ছিল তার।

পরে ভারতে 'দ্য এশিয়ান এজ' পত্রিকাগোষ্ঠীর প্রধান কর্ণধার ও সম্পাদক হিসেবেও তিনি বহুদিন দায়িত্ব সামলেছেন। আশির দশকের শেষ দিকে এম জে আকবর সাংবাদিকতা ছেড়ে রাজনীতিতে যোগদান করেন। কংগ্রেসের টিকেটে বিহারের কিষাণগঞ্জ থেকে নির্বাচিত হয়ে তিনি এমপি হয়েছিলেন।

এক সময় রাজীব গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হলেও পরে তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে অনেককে চমকে দিয়েই তিনি যোগ দেন বিজেপিতে।

নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়েই তিনি বিজেপি থেকে রাজ্যসভা এমপি হয়েছেন। দায়িত্ব পেয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীরও। একজন বাংলাভাষী মন্ত্রী হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলো তিনিই মূলত দেখাশোনা করেন।

বাংলাদেশ থেকে নেতা-মন্ত্রীরা ভারত সফরে এলেও প্রায় অবধারিতভাবেই তারা এম জে আকবরের সঙ্গে দেখা করেন, বৈঠক করেন।

যৌন লাঞ্ছনার অভিযোগ নিয়ে আকবরের কোনো বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। তিনি সরকারি সফরে এই মুহূর্তে নাইজেরিয়াতে আছেন। বিবিসি বাংলা।

এসআইএস/আরআইপি

আরও পড়ুন