বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলার অভিযোগ রাশিয়ার বিরুদ্ধে
বিশ্বব্যাপী সাইবার হামলার একের পর এক অভিযোগ আসছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে। দেশটির গোয়েন্দাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী সিরিজ সাইবার হামলার অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডস রাশিয়ার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সাইবার হামলার পরিকল্পনার জন্য সাত রুশ নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু সংস্থা হামলার মূল টার্গেট ছিল।
রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের এই ঐক্যবদ্ধ অবস্থান রাশিয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগেও এমন অভিযোগ এসেছিল। সেই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছিল দেশটি।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, যুক্তরাজ্য তাদের মিত্রদের নিয়ে রাশিয়ার উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে আলোচনা করছে। ডাচ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়ার সব কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তারা বলতে চাইছেন যে, রাশিয়াকে এমন কাজ বন্ধ করতে হবে।
পশ্চিমারা রাশিয়াকে একঘরে করে ফেলতে চাইছে। পরিস্থিতি রাশিয়াকে বেকায়দায় ফেলেছে বলে অনেকে মনে করেন।নেদারল্যান্ডস বলছে, রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ সংগঠন ‘ওপিসিডব্লিউ’-এর বিরুদ্ধে সাইবার হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এই সংগঠনটি যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার সাবেক গুপ্তচরের ওপর রাসায়নিক হামলার ঘটনার তদন্ত করছে। সেকারণে এই প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার লক্ষ্য হতে পারে। এই হামলার পরিকল্পনার জন্য চার রুশ নাগরিককে বহিস্কার করেছে নেদারল্যান্ডস।
যুক্তরাজ্য সরকার রাশিয়ার সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জিআরইউ এর বিরুদ্ধে বড় ধরণের চারটি সাইবার হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছে। যুক্তরাজ্য বলছে, তাদের দেশের একটি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক পার্টি সাইবার হামলার টার্গেট ছিল।
এমনকি রাশিয়া এবং ইউক্রেনে অবস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও হামলার টার্গেট হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, বিশ্বব্যাপী রাসায়নিক অস্ত্র পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এবং যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু সংস্থা হামলার মূল টার্গেট ছিল।
কানাডা বলছে, মন্ট্রিলভিত্তিক ওয়ার্ল্ড এন্টিডপিং এজেন্সির সিস্টেমে হামলা করে অ্যাথলেটদের তথ্য নেয়া হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এক বিবৃতিতে বলেছে, তাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং ক্রীড়া প্রতিষ্ঠানে একই ধরণের রুশ হামলার প্রমাণ পেয়েছে।
ডাচ কর্তৃপক্ষ বলছে, গত এপ্রিল মাসে চারজন সন্দেহভাজনের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়েছিল। এই ল্যাপটপ ব্রাজিল, সুইজারল্যান্ড এবং মালয়েশিয়ায় ব্যবহৃত হয়েছে।
এই সন্দেহভাজনদের যখন শণাক্ত করা হয়, তখন ডাচ কর্তৃপক্ষ তাদের কাছে কূটনৈতিক পাসপোর্ট পেয়েছিল। তাদের দু’জন ছিল আইটি বিশেষজ্ঞ এবং বাকি দু’জন ছিল সহায়তাকারি এজেন্ট। চারজন একটি গাড়ি ভাড়া করে হেগে মেরিয়ট হোটেলের পার্কিং এ পার্ক করেছিল। এই হোটেল থেকে অল্প দূরত্বে রাসায়নিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ প্রতিষ্ঠান ‘ওপিসিডব্লিউ’ এর কার্যালয়।
ডাচ গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, কার পার্কিং থেকে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ওপিসিডব্লিউ এর ওপর সাইবার হামলা চালানো হয়। ওই চারজন ভাড়া করা গাড়িটির পেছনে একটি জ্যাকেটের পকেটে ওয়াইফাই প্যানেলের অ্যান্টিনা রেখে সেখান থেকে তা ব্যবহার করেছে।
গাড়ির পেছনেই তারা ট্রান্সফরমার, কম্পিউটারসহ সাইবার হামলা চালানোর সব যন্ত্র রেখে তা ব্যবহার করেছে। ডাচ গোয়েন্দারা এমন প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে। ডাচ গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, যখন তাদের সন্দেহভাজন হিসেবে আটকানো হয়, তখন তারা একটি মোবাইল ফোন ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা করেছিল। তাদের কাছে পাওয়া একটি মোবাইল ফোন তারা মস্কোয় রুশ গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ের কাছ থেকে সক্রিয় করেছিল।
বিভিন্ন দেশ থেকে একের পর এক অভিযোগ তোলার বিষয়টি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরেকটি পরিকল্পিত প্রচারণা বলে মনে করছে দেশটি। যখন অভিযোগের ঝড় উঠেছে, তখন অনেকটা বিলম্বেই বৃহস্পতিবার রাশিয়ার স্থানীয় সময় বিকেলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে এই বক্তব্য দিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার কোনো নাগরিক মোবাইল ফোন ব্যবহার করলেই তাকে গুপ্তচর বানানো হচ্ছে। রাশিয়া তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগকে উর্বর কল্পনা বলে আখ্যা দিয়েছে।
টিটিএন/এমএস