দ. চীন সাগরে অল্পের জন্য সংঘর্ষ এড়াল চীন-মার্কিন যুদ্ধজাহাজ
দক্ষিণ চীন সাগরে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দুটি যুদ্ধজাহাজ খুব কাছাকাছি চলে আসার পর অল্পের জন্যে সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শেষ পর্যন্ত চীনের যুদ্ধজাহাজটি মার্কিন রণতরীর গতিপথ পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী বলছে, চীনা জাহাজটি তাদের রণতরীর এতটাই কাছে পৌঁছে গিয়েছিল; যা কোনভাবেই নিরাপদ নয় এবং অপেশাদারসুলভ।
বেইজিং বলছে, সাগরের স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডস দ্বীপের গ্যাভেন অ্যান্ড জনসন রীফের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ডেকাটুর। মার্কিন নৌবাহিনীর কমান্ডার ন্যাট ক্রিস্টিয়ানসেন বলেন, এসময় চীনের লুয়াং ডেস্ট্রয়ারটি ডেকাটুরের ৪৫ গজের মধ্যে চলে আসে।
আরও পড়ুন : পদার্থের নোবেল জয় তিন বিজ্ঞানীর
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজটি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় চীনা রণতরীটি গ্যাভেন রীফের কাছে বিপজ্জনকভাবে তাদের খুব কাছাকাছি চলে আসে; যা এক ধরনের আগ্রাসী আচরণ।
সাগরের এই জলসীমা ও দ্বীপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বহু বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। এসব দ্বীপের মালিকানা নিয়ে তারা এর আগে পরস্পরকে হুমকিও দিয়েছে।
ওই জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ চলাচলের ঘটনা নিয়ে চীনের সাথে প্রায়ই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এশিয়ার আরো কয়েকটি দেশের সাথেও এসব রীফ ও দ্বীপের মালিকানা নিয়ে চীনের বিরোধ রয়েছে।
একইসাথে তাইওয়ান, ফিলিপাইন, ব্রুনেই, মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনাম এই জলসীমা তাদের নিজেদের বলে দাবি করে থাকে। কিন্তু জাহাজ চলাচলের জন্য এই এলাকাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট।
আরও পড়ুন : মুসলিমরা রামের বংশধর : বিজেপি নেতা
চীন যে এলাকাটি তাদের নিজেদের বলে দাবী করে; সেটি সাগরের বিস্তৃত একটি এলাকা। এই অংশের নাম নাইন-ড্যাশ লাইন। বেইজিং এর পক্ষ থেকে প্রায়ই অভিযোগ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ওই এলাকায় হস্তক্ষেপ করে আঞ্চলিকভাবে উসকানি দেয়ার চেষ্টা করে থাকে। এই অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করে এসেছে ওয়াশিংটন।
ইউএসএস ডেকাটুর যুদ্ধজাহাজটি রোববার গ্যাভেন এন্ড জনসন রীফের ১২ নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলে গিয়েছিল। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, চীনা এই রণতরী এতটা কাছে চলে এসেছিল যে সংঘর্ষ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
কিন্তু চীন বলছে, দক্ষিণ চীন সাগরের ওই এলাকায় মার্কিন রণতরী পাঠানো তাদের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হুমকি।
চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, কোন ধরনের অনুমতি না নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপগুলোর খুব কাছাকাছি বারবার সামরিক জাহাজ পাঠাচ্ছে। এটা চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্যে বড় ধরনের হুমকি। এর ফলে চীন-মার্কিন সামরিক সম্পর্কও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আঞ্চলিক শান্তি এবং স্থিতিশীলতাও।
বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে যখন দুটি দেশের মধ্যে বাণিজ্য নিয়ে উত্তেজনা চলছে, ঠিক তখনই এরকম একটি ঘটনা ঘটলো। দুই দেশই সম্প্রতি একে অপরের পণ্য আমাদানির উপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করেছে।
গত সপ্তাহে চীন রাশিয়ার কাছ থেকে জঙ্গি বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র কিনতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্র চীনা সামরিক বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এর পরই চীনের পক্ষ থেকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করা হয়। চলতি মাসের শেষের দিকে বৈঠকটি হওয়ার কথা ছিল।
আরও পড়ুন : ইরানে ভেজাল মদ খেয়ে ৪২ জনের মৃত্যু
দক্ষিণ চীন সাগর বিরোধ
>>সাগরের দু'টি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বিরোধ চলছে। এসব দ্বীপে কোন মানুষ থাকে না। দ্বীপ দু'টির নাম পারাসেলস এবং স্প্র্যাটলি আইল্যান্ডস; যার মালিকানা নিয়ে চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, তাইওয়ান এবং মালয়েশিয়ার বিরোধ রয়েছে।
>>চীন ওই এলাকার বৃহত্তর অংশের মালিকানা দাবি করে। বেইজিং বলছে, গত কয়েক শতাব্দী ধরেই এই এলাকা তাদের। মালিকানা দাবী করে চীন ১৯৪৭ সালে ওই এলাকার একটি বিস্তারিত ম্যাপ প্রকাশ করে।
>>এলাকাটি জাহাজ চলাচলের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি পথ। আছে প্রচুর মৎস্য সম্পদ। ধারণা করা হয়, সেখানে তেল ও গ্যাসের বড় ধরনের ভাণ্ডারও রয়েছে। বিবিসি বাংলা।
এসএ/এসআইএস/পিআর