নেতানিয়াহুর দাবি, গোপন পারমাণবিক অস্ত্রাগার রয়েছে ইরানে
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, তার গোয়েন্দারা তেহরানের কেন্দ্রস্থলেই একটি গোপন পারমাণবিক অস্ত্রাগারের সন্ধান পেয়েছেন। তার এ বক্তব্যে দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা আরও বাড়বে। একইসঙ্গে নেতানিয়াহুর এ বক্তব্যে ইরান সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জও ছুড়ে দেয়া হয়েছে- ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি যে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন করছে না, তা প্রমাণে দেশটি আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দিক।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় এ কথা বলেন নেতানিয়াহু। যে পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে এ দিন নেতানিয়াহু এমন অভিযোগ আনলেন সেই পোডিয়ামে দাঁড়িয়েই, আগের বছরগুলোতে তিনি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তির জোর বিরোধিতা করেছিলেন। নেতানিয়াহু বলছেন, গেল জানুয়ারিতেই এই অস্ত্রাগার থেকে মাত্র তিন মাইল দূরের একটি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয় ইসরায়েলি গোয়েন্দারা।
নেতানিয়াহু বলেন, আজ, আমি প্রথমবারের মতো এটা প্রকাশ করছি যে, তেহরানে ইরানের আরকটি গোপন পারমাণবিক স্থাপনা রয়েছে। ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির যে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে এর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সেখানে সংরক্ষণ করা হয়।
তবে ঠিক কী ধরনের জিনিস সংরক্ষণ করা হয় তা পরিষ্কার করেননি নেতানিয়াহু। চুক্তির শর্ত মোতাবেক কোনো কোনো উপকরণ সংরক্ষণ করা বৈধও হতে পারে।
নেতানিয়াহুর এসব বক্তব্যকে মিথ্যা, অর্থহীন এবং অপ্রয়োজনীয় বলে আখ্যা দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র।
তারপরও নেতানিয়াহুর এসব দাবি ভিয়েনার ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক অ্যানার্জি এজেন্সিকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দেবে। কারণ, ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনায় নিয়মিত পরিদর্শন করেন তারা। এই এজেন্সিকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ইসরায়েলের গোয়েন্দাদের দেয়া তথ্যের ওপর ভর করে তারা এখন নতুন খোঁজ পাওয়া স্থাপনায় প্রবেশাধিকার চাইবে কি না।
অ্যাটোমিক অ্যানার্জি এজেন্সি যদি ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের তথ্যকে পাত্তা না দেয়, তবে সেক্ষেত্রে এ এজেন্সির কর্মকাণ্ড নিয়ে নেতানিয়াহু যে অভিযোগ করে আসছিলেন যে, এজেন্সি কেবল জানাশোনা স্থাপনাগুলোই পরিদর্শন করে, তা আরও জোরদার হবে। আবার এজেন্সি যদি নতুন অস্ত্রাগারে প্রবেশাধিকার চায় তবে প্রতিবাদ করে উঠতে পারে ইরান। বলবে, তারা ইসরায়েলের হয়ে কাজ করছে।
বক্তব্য দেয়ার সময় নেতানিয়াহুর দাবি অনুযায়ী ইরানের তুরকুজাবাদের কাছের একটি স্থাপনার মানচিত্রও দেখান তিনি।
গুগল স্ট্রিট ভিউ থেকে পাওয়া একটি ভবনের ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, এটাও দেখতে একেবারে নিরীহ।
অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশে ভবনের অবস্থানের বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, যারা বাড়িতে আছেন তারা গুগল আর্থে দেখে নিতে পারেন। একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে, এক্ষুণি পরিদর্শন করলে কেমন হয়?
এরআগে এপ্রিলে নেতানিয়াহু যখন ঘোষণা দিয়েছিলেন তার দেশের গোয়েন্দারা পারমাণবিক সংরক্ষণাগার থেকে জিনিসপত্র জব্দ করেছেন তখন সে খবর তাদের প্রত্যাশ্যা অনুযায়ী গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়ে ওঠেনি, আবার বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তেমন একটা আলোচনাও জন্ম দেয়নি। এ বিষয়টা নিয়ে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা খানিকটা হতাশ ছিলেন।
এরপর জুলাইয়ের ওইসব জিনিসপত্র পরীক্ষার জন্য তিন সাংবাদিককে আমন্ত্রণ জানান নেতানিয়াহু সরকার। তবে তখন যেসব বিষয়ে জানানো হয় তা আগে থেকেই জানা ছিল। যেমন : ২০০৩ সালের আগে ইরানের বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কাজ করছিলেন, ওই কর্মসূচির কোড-নাম ছিল ‘প্রজেক্ট আমাদ।’ পরে অবশ্য সেই কর্মসূচি স্থগিত করা হয় ও তা অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়।
তবে তখন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দ্বিতীয় কোনো স্থাপনার বিষয়ে কথা বলেছিলেন না।
তবে এপ্রিলের ওইসব তথ্য-প্রমাণের বিষয়ে ইরান বরে আসছে, ওগুলো ভুয়া, ইসরায়েলের তৈরি।
বৃহস্পতিবার বক্তব্যে নেতানিয়াহু দাবি করেন, ইরান তাদের পারমাণবিক সংরক্ষণাগার ও অস্ত্রাগার এখনও ধ্বংস করেনি, তাদের মনে এখনও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খায়েস রয়ে গেছে।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, তেহরানের শাসকদের জন্য আমার একটা বার্তা রয়েছে, তা হলো- তোমরা কী করছো ইসরায়েল সব জানে।
‘ইরান যা লুকাবে, ইসরায়েল তা খুঁজে বের করবে।’
তিনি আরও বলেন, তিনবছর আগে আমি যখন এখানে কথা বলেছিলেম, তখন এই হলে থাকা প্রায় ২শ দেশের মধ্যে ইসরায়েল একাই তার পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। একমাত্র ইসরায়েলই ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিল। আমরা বিরোধিতা করেছিলাম, কারণ এটা আমাদের ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে, এমনকি আমাদের অস্তিত্বকে।
সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস।
এনএফ/এমএস