চীনা হুঙ্কার : কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারবে না
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে সোমবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোর সম্পাদকীয়তে দেশটির অবস্থানের বিষয়ে জোর গলায় সাফাই গাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করা হয়েছে এ বলে যে, এভাবে দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করা হলে তা কেবল দু’দেশের সম্পর্কেই প্রভাব ফেলবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও বিশ্ববাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনৈতিক শক্তি সোমবার থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনা আরও বেড়েছে। তারই মধ্যে এমন প্রতিক্রিয়া এলো চীনের তরফ থেকে।
সর্বশেষ প্রায় ২শ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের শেষ নাগাদ শুল্কের এ হার ২৫ শতাংশ হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ৬০ বিলিয়ন ডলারের ৫ হাজার ২০৭টি চীনা পণ্যের ওপর কর আরোপ করে চীনা সরকার। সোমবার থেকে এটি কার্যকর হওয়ার আগেই দেশ দু’টি একে অপরের ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছিল।
সোমবারের গ্লোবাল টাইমস ও চায়না ডেইলির মতো চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত পত্রিকাগুলোর সম্পাদকীয়তে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লেখা হয়েছে, ওয়াশিংটনের চাপের মুখেও চীন শান্ত থেকেছে ও যৌক্তিক আচরণ করে গেছে।
চায়না ডেইলির সোমবারের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক আরোপের এ কৌশলকে মধ্যস্থতার একটা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করে থাকে তবে তা দুই দেশের অর্থনীতিকেই বিপদের মুখে ঠেলে দেবে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও এর প্রভাব বিস্তৃত হবে।
পত্রিকাটি আরও বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা পদক্ষেপ কেবল যুক্তরাষ্ট্র-চীনের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক কার্যক্রমকেই বাধাগ্রস্থ করেনি, তা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির লাগামও টেনে ধরবে। সুতরাং ট্রাম্প প্রশাসন যদি তাদের একতরফা অবস্থানে অটল থাকে এবং পারস্পারিক শ্রদ্ধা ও আলোচনার ক্ষেত্রের মৌলিক রীতিগুলোতে শ্রদ্ধা প্রদর্শনে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তার ফলে ভবিষ্যতে দুই দেশের বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনো আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবিক অগ্রগতি অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে।
ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, যৌক্তিক একটি বাণিজ্যচুক্তির জন্য চীন সব সময় আন্তরিক থেকেছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রভাব খাটিয়ে গেছে।
আরও কয়েকটি সম্পাদকীয়তে তুলে ধরা হয়েছে, চীনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন যে অনৈতিক বাণিজ্য ও নিয়ন্ত্রণ আরোপের অভিযোগ করে আসছে তার ফলে দুই দেশের সম্পর্ক কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
চায়না ডেইলির সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়েছে, চীন চৌর্যবৃত্তিতে সম্পৃক্ত, মেধা সম্পত্তি জোরপূর্বক হস্তান্তর এবং অন্যান্য অনৈতিক বাণিজ্যে জড়িত বলে যুক্তরাষ্ট্র যেসব দাবি করে আসছে তার ফলে বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের দীর্ঘদিনের মতৈক্য হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে সেগুলো যদি আসলে আলোচনায় বসতে চাওয়ার কোনো কৌশলও হয়ে থাকে, শেষ পর্যন্ত তা না হয়ে ফল হবে উল্টো।
চীনের কমিউনিস্ট পার্টি পরিচালিত গ্লোবাল টাইমসের সোমবারের সম্পাদকীয়তে মার্কিনিদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন চীনের শক্তিকে বুঝতে চেষ্টা করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, চীন তাই করছে যা করা উচিৎ। নীতির ক্ষেত্রে চীন অবিচল, সৎ এবং প্রগাঢ় ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি। কেউ আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
সূত্র : সিএনবিসি।
এনএফ/পিআর