ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সিরিয়ার মানুষকে হাসাতে চায় যে রেডিও

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রেডিও আলওয়ান একটি ছোট্ট, স্বাধীন এবং রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ রেডিও স্টেশন। ২০১৪ সালে সিরিয়ায় এর জন্ম, কিন্তু নির্বাসিত হওয়ায় তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে সম্প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠান পরিকল্পনায় মাথায় রাখা হয়েছে সিরিয়ার যুদ্ধ, কষ্ট আর যন্ত্রণার কথা। যে কারণে তাদের পরিকল্পনার বড় অংশ জুড়ে ছিল কীভাবে হাসি ফোটানো যাবে শ্রোতাদের মুখে। কমেডি বা হাস্যরসাত্মক নাটক, কৌতুকের আসর আর নানা ধরনের ঠাট্টা-তামাশা ছিল রেডিওটির মূল আকর্ষণ। এমনকি তাদের মানসিক যন্ত্রণা লাঘবের জন্য অনুষ্ঠিত হয়েছে ফোন-ইন অনুষ্ঠান।

কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই রেডিওটির অবস্থা সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশের মতই বিধ্বস্ত। ব্রিটিশ সাংবাদিক এমা জেইন কিরবি শুরু থেকে রেডিওটির বেড়ে ওঠা পর্যবেক্ষণ করছেন। বেশ কয়েকবার তিনি গেছেন রেডিও স্টেশনটিতে। তিনি বলেন, সেখানে সারাক্ষণই কেউ না কেউ নতুন কোন কৌতুকে মাতিয়ে রাখছে চারপাশ। এমনই ছিল সেখানকার পরিবেশ।

এবার এমা যখন আরেকবার আলওয়ানে যাবার পরিকল্পনা করছেন, তখন রেডিওটির প্রজেক্ট ম্যানেজার সামি ভদ্রতা করে তাকে সরাসরি না করেননি যেতে। কিন্তু যা বলেছেন, তার মানে দাঁড়ায় এসে কোন লাভ নেই আর, কেননা আলওয়ানের সব হাসি ঠাট্টা ফুরিয়ে গেছে।

রেডিও আলওয়ানের বেহাল দশা কেন? কারণ আর কিছুই না, সাত বছরের গৃহযুদ্ধে সিরিয়া কেবল রক্তাক্তই নয়, কোথাও কোথাও শুকিয়ে খটখটেও হয়ে গেছে। ব্যতিক্রমী উপস্থাপনায় খবর আর নানাবিধ ভিন্ন পরিবেশনার অনুষ্ঠান নিয়ে সাজানো এই রেডিওটির অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে।

প্রায় সব কর্মী চাকরি হারিয়েছেন। সিরিয়ার ভেতরকার সব অফিস বিধ্বস্ত, সাংবাদিকদের অনেকে পেশা বদলে ফেলেছেন। কেবল সিরিয়ার ইদলিবে ছয়জন কর্মী আছেন, যারা সেখানকার বাকী বাসিন্দাদের মত অজানা ভবিষ্যতের জন্য আশংকা নিয়ে অপেক্ষা করছেন।

উত্তর পশ্চিম সিরিয়ায় বহু অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা এনজিওর মত রেডিও আলওয়ানও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন এক সিদ্ধান্তের খড়গের নিচে পড়েছে। গত ইস্টারের সময় ট্রাম্প নিয়ম করেন, সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য দেশটিতে কর্মরত সকল অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বা এনজিওকে ২০ কোটি ডলার অর্থায়ন করতে হবে।

এরপর সামি সিদ্ধান্ত নেন ইদলিবে নতুন করে অফিস খোলার, কারণ সেটা তখন অন্যান্য জায়গার তুলনায় নিরাপদ ছিল।

রেডিও স্টেশনটি সিরিয়ার মানুষের মনে আশার সঞ্চার করার চেষ্টা করত। এখন দুজন নারী উপস্থাপক, দুজন পুরুষ উপস্থাপক আর দুজন সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার আটকে আছেন ইদলিবে। নিজেদের পরিবার পরিজনের সঙ্গে রাসায়নিক হামলার আশংকা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন তারা।

ইদলিব নিয়ে পরাশক্তি দেশগুলো যখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা পাল্টা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, সমাধান ছাড়াই বৈঠকের পর বৈঠক করছেন, তখনো সম্প্রচার চলছে আলওয়ানের। কেবল সংবাদ নয়, এখনও রেডিওতে প্রচার হচ্ছে কবিতা আর সাহিত্যের আসর, রয়েছে সঙ্গীত, সংস্কৃতি আর নারী ইস্যুর ওপর নিয়মিত আলোচনা।

এমাকে সামি বলছিলেন, টিমের একজন একটা স্মার্টফোন জোগাড় করেছে, ফলে সামনের সপ্তাহ থেকেই আবারো শুরু হচ্ছে ফোন-ইন, অর্থাৎ যে অনুষ্ঠানে শ্রোতারা সরাসরি মতামত দিতে পারেন। সিরিয়ার সব মানুষের মতো এখন তাদেরও প্রত্যাশা বিনা রক্তপাতে কিংবা যত কম রক্তের বিনিময়ে দেশটিতে শান্তি ফিরে আসবে। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত ইথারে মন ভালো করার পঙক্তিমালা পাঠাতে থাকবে আলওয়ান বলছিলেন সামি।

টিটিএন/পিআর

আরও পড়ুন