সৌদি নারীর সঙ্গে নাস্তা করায় মিসরীয় পুরুষ গ্রেফতার
সৌদি আরবে এক নারীর সঙ্গে বসে সকালের নাস্তা করার অপরাধে এক মিসরীয় পুরুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের দু'জনের এক সঙ্গে বসে নাস্তা করার ভিডিও টুইটারে ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। টুইটারে অনেকেই তাদের দু'জনের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন।
টুইটারে শেয়ার করা ভিডিওতে দেখা গেছে, মিসরীয় টানে আরবী বলছে এমন এক পুরুষ নাস্তা করছে। তার পাশে বসে আছে বোরকা পরা এক নারী। নেকাবে মুখ ঢাকা ওই নারীকে সৌদি বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে।
সৌদি আরবে অনাত্মীয় নারী-পুরুষের এভাবে প্রকাশ্যে কোন রেস্টুরেন্টে একসঙ্গে বসা নিষেধ। ম্যাকডোনাল্ডসের মতো রেস্টুরেন্টে বা স্টারবাকসের মতো কফি শপে তাদের বসতে হয় পৃথক জায়গায়।
পুরুষ কোন আত্মীয় সঙ্গে না নিয়ে মেয়েদের একা বাইরে যাওয়াও নিষেধ। সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় এই মিসরীয় ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে কেবলমাত্র সৌদি নাগরিকদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় গিয়ে বসা এবং আরও কয়েকটি আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
টুইটারে তাদের দু'জনের এই ভিডিওটি শেয়ার করা হয় ‘এক সৌদি নারীর সঙ্গে মিসরীয় পুরুষের প্রাতরাশ’ হ্যাশট্যাগে। এরপর এই হ্যাশট্যাগটি এক লাখের বেশিবার ব্যবহৃত হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে সৌদিদের সঙ্গে মিসরীয়দের রীতিমত বাকযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে টুইটারে।
টুইটারে শেয়ার করা পুরো ভিডিওটি মাত্র তিরিশ সেকেন্ডের। সেখানে এই দু’জনকে এক সঙ্গে নাস্তা করার সময় হাসি-ঠাট্টা করতে দেখা যায়। আর কাউকে সেখানে দেখা যায়নি। তবে ভিডিওটির একেবারে শেষ দিকে দেখা যায়, মিসরীয় পুরুষকে খাবার তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন সঙ্গে থাকা ওই নারী। মূলত এই শেষ অংশটিই সৌদি আরবে অনেক মানুষকে মারাত্মক ক্ষিপ্ত করে তুলেছে।
টুইটারে অনেক সৌদি এর তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, কেবলমাত্র কেন পুরুষটিকেই এ ঘটনার সাজা ভোগ করতে হচ্ছে, নারী কেন রেহাই পেল!
মালাক নামে একজন টুইটারে মন্তব্য করেছেন, আমার জানা দরকার কেন পুরুষরাই কেবল সাজা পায়, নারীরা নয়। আমি এক সৌদি নারী এবং আমি চাই এই নারীরও শাস্তি হোক। কাজের জায়গায় বসে হাসি-ঠাট্টা আর খাওয়া-দাওয়া..... তোমাদের সীমা কোথায়?
তবে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন কর্মক্ষেত্রে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ থাকা উচিৎ নয়। তারেক আবদুল আজিজ নামে একজন লিখেছেন, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সহকর্মীদের একসঙ্গে রসিকতা করা বা খাওয়া-দাওয়া করার অধিকার থাকা উচিৎ।
কিন্তু অন্য একজন বলছেন, বিদেশিদের সঙ্গে সৌদি নারীদের কাজ করার সুযোগ করে দেয়ার কারণে সৌদিদের অনেক সামাজিক অনুশাসন, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তবে সৌদি আরবে এই ঘটনা নিয়ে যেরকম শোরগোল শুরু হয়েছে, তাতে মিসরের মানুষ খুব অবাক। এরকম একটি নির্দোষ ভিডিওর কারণে যে কাউকে গ্রেফতার করা হতে পারে, সেটা নিয়ে তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
সম্প্রতি সৌদি আরবে যেখানে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে, সেখানে কিভাবে এরকম একটি ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হলো, সেই প্রশ্নও তুলেছেন অনেকেই।
টেলিভিশন উপস্থাপক ওসামা গাউইশ বলেছেন, ‘সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান না এক নতুন মুক্ত সৌদি আরব চান যেখানে কনসার্ট, সিনেমা আর সমূদ্র সৈকত থাকবে? আর সোনিয়া নামে এক মিসরীয় নারী বলেছেন, এটি আসলে কিছু সৌদি পুরুষের ‘ভঙ্গুর অহমিকার’ ফল।
টিটিএন/জেআইএম