ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক ঘনিষ্ঠ হচ্ছে রাশিয়া-চীনের
খ্রিস্টান এক ধর্মযাজককে আটকে রাখার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ফলে ন্যাটোর সদস্য দেশ হওয়া সত্ত্বেও রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে নতুন জোট গড়ার চিন্তা-ভাবনা করছে তুরস্ক।
দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও তার প্রশাসন সঙ্কট কাটাতে এখনও নমনীয় হতে প্রস্তুত নন। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি বরং সংঘাতের পথেই থাকছেন। বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমাতে দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ওপরও জোর দিয়েছেন এরদোয়ান।
যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে তিনি মার্কিন ইলেকট্রনিক পণ্য বর্জনের ডাক দেয়ার পাশাপাশি সে দেশ থেকে গাড়ি, তামাক, মদসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কের হার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়র ক্ষেত্রে ১৪০ গুণ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, গাড়ির ক্ষেত্রে তা ১২০ শতাংশ। প্লাস্টিক ও কয়লার ক্ষেত্রেও শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়েছেন এরদোয়ান।
এর আগে মার্কিন প্রশাসন তুরস্ক থেকে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি শুল্ক চাপিয়েছে। গত শুক্রবার হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তুরস্কের ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আমদানি শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত টুইট করে ঘোষণা করলে রাতারাতি তুরস্কের মুদ্রা লিরার ধস নামে। দু'দিনেই লিরার মূল্যমান ২০ শতাংশ পড়ে যায়। মঙ্গলবার লিরা আবার কিছুটা মাথা তুলে দাঁড়ালেও সমস্যা এখনও রয়ে গেছে। তুরস্কের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ সত্ত্বেও বাজারে অনিশ্চয়তা কাটছে না।
কিন্তু তারপরও এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের ভীতি বা দুর্বলতা প্রকাশের কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। গত কয়েকদিন আমেরিকাকে ক্রুদ্ধ ভাষায় আক্রমণের পর বুধবার প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান পাল্টা ব্যবস্থার ঘোষণা দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গাড়ি, মদ এবং তামাকের ওপর শুল্ক দ্বিগুণ করার একটি নির্বাহী নির্দেশে সই করেছেন তিনি। গাড়ির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ১২০ শতাংশ করা হয়েছে, মদ আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৪০ শতাংশ এবং তামাকের ওপর ৬০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা চাল, কয়লা এবং প্রসাধন সামগ্রীর ওপরও শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া যে ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ন্যাটো জোটের দুই সদস্য দেশের মধ্যে অভাবনীয় বৈরিতা শুরু হয়েছে, সেই খ্রিস্টান যাজক অ্যান্ড্রু ব্রানসনকে জামিন দেওয়ার এক আবেদন বুধবার খারিজ করে দিয়েছে তুরস্কের একটি আদালত।
২০১৬ সালে তুরস্কে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকার অভিযোগে এই খ্রিস্টান যাজককে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ৩৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। তবে ব্রানসন নিজে এবং আমেরিকার সরকার বার বার দাবি করেছে, তুরস্কের অভ্যুত্থানের সঙ্গে তার কোনোই সম্পর্ক ছিল না।
নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্র বলছে, তার মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে টেলিফোন করে এরদোয়ানকে একাধিকবার অনুরোধ করলেও, তা তোয়াক্কা করেননি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। শুল্ক বাড়ানোর জেরে সোমবার লিরার মূল্য রেকর্ড নিচুতে নেমে যাওয়ার পরও আপোষের কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না তুরস্কের সরকার।
এদিকে ব্রানসন মুক্তি না পেলে আরও কড়া অর্থনৈতিক চাপের ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সোমবার মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ওয়াশিংটনে তুরস্কের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে মার্কিন যাজক ব্রানসনের মুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন। তবে তুরস্ক তাদের দেশের বিচার ব্যবস্থায় বাহিরের হস্তক্ষেপ অস্বীকার করছে।
কাজেই অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলা ও উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে তুরস্ক।
প্রসঙ্গত, ন্যাটো (North Atlantic Treaty Organisation) মার্কিন নেতৃত্বাধীন একটি সামরিক সহযোগিতার জোট। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এই জোটের শর্তানুযায়ী এর সদস্য দেশগুলো অন্য কোনো সামরিক জোটে থাকতে পরবে না।
সূত্র- ডয়চে ভেলে।
এমবিআর/আরআইপি