ভি এস নাইপল : দাস পরিবারে বেড়ে ওঠা এক কিংবদন্তি
সাহিত্যে নোবেলজয়ী ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক স্যার ভিএস নাইপল মারা গেছেন শনিবার রাতে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। তার স্ত্রী লেডি নাইপল মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে জানান, যাদের সঙ্গে স্যার ভিদিয়া জীবন কাটাতে ভালোবাসতেন মৃত্যুর সময়ে তারা তার পাশে ছিলেন। লন্ডনে নিজ বাড়িতেই শনিবার রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভিএস নাইপল।
লেডি নাইপল বলেন, তিনি ছিলেন সবকিছু অর্জন করা এক কিংবদন্তী। নাইপল যাদের ভালোবাসতেন, যাদের সঙ্গে উদ্যমী ও সৃষ্টিশীল অসাধারণ এক জীবন কাটিয়েছেন, তার শেষ সময়টাও তাদের সান্নিধ্যেই কেটেছে।
কালজয়ী এই লেখকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ভক্ত ও বন্ধুরা। নাইপলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেইলের সম্পাদক জিওর্ডি গ্রেইগ বলেছেন, তার মৃত্যুতে ব্রিটেনের সাহিত্য জগতে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হলো। তবে নিঃসন্দেহে তার সৃষ্টি কর্ম চিরদিন রয়ে যাবে।
ভ্রমণবিষয়ক মার্কিন লেখক পল থেরক্স বলেছেন, আমাদের সময়ের অনবদ্য এক লেখককে হারালাম। বিশ্ব সাহিত্য জগতে অনন্য এক লেখক ছিলেন স্যার ভিদিয়া। গল্প বলার অনন্য এক স্টাইল ছিল তার। মানুষের জীবনের আইরনি, দুঃখকষ্টের বিষয়গুলো তিনি পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন তার লেখায়।
ভিএস নাইপলের সমর্থকদের মতে, তার কাহিনীগুলোতে আছে স্বচ্ছতা, সততার সাথে তিনি ভ্রমণকাহিনী লিখেছেন। উন্নয়নশীল বিশ্বের আদর্শবাদ বা গ্ল্যামারকে দূরে রেখে তিনি লিখেছেন।
ভক্তরা স্যার নাইপলকে মনে করেন দক্ষ ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এক লেখক। যিনি ইসলামের নিষ্ঠুরতা, আফ্রিকার দুর্নীতি ও বিশ্বের দরিদ্রতম অংশের দুর্ভোগ নিজ চোখে দেখেছেন এবং সেগুলোর প্রকৃত সমালোচনাও করেছেন। রাজনীতির ভুলগুলোর তিক্ত সমালোচনার পুনরাবৃত্তিও ঘটেছে তার লেখায়।
তবে তার সমালোচকেরা মনে করেন, ভিএস নাইপলের লেখা ছিল উগ্রপন্থী এবং সমস্যাগ্রস্ত। বিদ্যাধর সূর্যপ্রসাদ নাইপল ১৯৩২ সালের ১৭ অাগস্ট ত্রিনিদাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। যে দ্বীপে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন সেখানে তখন বর্ণবাদ নিয়ে উত্তেজনা ছিল।
তার পূর্বপুরুষ ভারত থেকে ত্রিনিদাদে বসবাস শুরু করেছিল ভৃত্য হিসেবে। একজন হিন্দু হিসেবেই শৈশবে বেড়ে উঠেন নাইপল। নাইপলের বাবা শিপেরসাদ ছিলেন সাংবাদিক।
শিশু বয়সেই ভিএস নাইপল উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, চার্লস ডিকেন্স পড়েন বাবার কাছ থেকেই। তার বাবা তাকে ইউরোপীয় সাহিত্য পড়ে শোনাতেন এবং লিখতেও উৎসাহিত করতেন।
তিনি কুইন্স রয়েল কলেজে পড়াশোনা করেন। স্নাতক পড়ার সময় সরকারি স্কলারশিপ পেয়ে যান ও কমনওয়েলথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ পান নাইপল। ১৯৫০ সালে তিনি অক্সফোর্ডে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় হতাশা ও একাকীত্বে ভুগতেন তিনি এবং আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন নাইপল। তার জীবন বাঁচিয়েছেন তার বাবা। চিঠির মাধ্যমে ছেলের সাথে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। পিতা ও পুত্রের এসব চিঠি ১৯৯৯ সনে প্রকাশ করা হয়।
ভিএস নাইপল তার শৈশব নিয়ে লেখা শুরু করেন। তার প্রথম তিনটি বই- দ্য মিস্টিক মাসোর (১৯৫৭), দ্য সাফ্রেজ অব অ্যালভিরা (১৯৫৮) এবং মিগুয়েল স্ট্রিট (১৯৫৯) প্রকাশের পর ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। আর এই তিনটি বইয়ের কাহিনীই মূলত ক্যারিবীয় দ্বীপকে ঘিরে।
নোবেল পুরষ্কার
ভিএস নাইপলের লেখা সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যা বেন্ড ইন দ্য রিভার, ইন অ্যা ফ্রি স্টেট, এন এরিয়া অব ডার্কনেস, হাফ এ লাইফ।
'এ হাউজ ফর মিস্টার বিশ্বাস' তার সেরা কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই উপন্যাসটি লিখতে তার তিন বছর সময় লেগেছিল। ২০০১ সালে নোবেল পুরস্কার পান ভিএস নাইপল। ২০১৬ সালে ঢাকা লিট ফেস্টে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন কিংবদন্তি এই লেখক। বিবিসি।
এসআইএস/পিআর