পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ?
বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক বা পরকীয়া নিয়ে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আইন রয়েছে। তবে পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ, নাকি একটি সামাজিক ব্যাধি? -এমনই প্রশ্ন তুলেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক বা পরকীয়া একটি অপরাধ এবং এ ধরনের সম্পর্কে যুক্ত থাকার বিষয়ে আদালতে প্রমাণিত হলে দোষী পুরুষের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে প্রায় দেড়শ বছর আগে ভারতের দণ্ডবিধিতে যুক্ত হওয়া এ ধারার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের একটি বেঞ্চ গত বুধবার পরকীয়া প্রেম নিয়ে চূড়ান্ত কোনো নির্দেশ না দিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কেরালার এক বাসিন্দা কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন যে, ৪৯৭ নম্বর ধারাটি দণ্ডবিধি থেকে বাতিল করা হোক। সেই মামলার শুনানিতেই আদালত প্রশ্ন তোলে যে, একটি সম্পর্কে দু’জন জড়িত হলেও তাদের মধ্যে পুরুষ মানুষটির সাজা হবে, আর নারীর সাজা হবে না, এটা অনুচিত।
এ বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জী বলেছেন, দেড়শ বছর আগে যেভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে দেখা হতো, সেটা তো এখন হয় না। নারী-পুরুষ উভয়েই এক সঙ্গে কাজ করেন, হয়তো অফিসের প্রয়োজনে বাইরেও যান একসাথে। তাই মেলামেশার ধরণ যেমন পাল্টেছে, তেমনই বদল এসেছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও। অন্যদিকে পরিবার, সমাজ -এগুলোকেও রক্ষা করার প্রয়োজন। তাই সব দিকে সামঞ্জস্য রেখে দেড়শ বছরের পুরনো আইনের এই ধারাটি বদলানো প্রয়োজন।
কলকাতা হাইকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী ভারতী মুৎসুদ্দি এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রশ্নটা অনেকদিন থেকেই উঠেছে যে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত পুরুষটির সাজা হবে অথচ নারীটির কোনো সাজা হবে না কেন? পুরুষটির যেমন সাজা দেয়ার বিধান রয়েছে, এ রকম সম্পর্কে জড়িত নারীটিরও শাস্তি হওয়া উচিত।’
তবে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কটিতে যদি সে নারীর স্বামীর সম্মতি থাকে তাহলে কি তা অপরাধ বলে গণ্য হবে না? এমন প্রশ্নও তুলেছেন বিচারপতিরা। তারা এটাও মন্তব্য করেছেন, এ ধারাটিতে শুধু বিবাহিত নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ থাকবে কেন? কোনো পুরুষ তো অবিবাহিত নারী বা বিধবা নারীর সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আইনে কেন কিছু বলা থাকবে না?
এ বিষয়ে মুৎসুদ্দি বলেন, ‘যদি কোনো নারী ব্যভিচারে লিপ্ত হন, সে স্বামীর অনুমতি নিয়েই হোক বা বিনা অনুমতিতে, সাজা তারও হওয়া দরকার। আইনটা থাকাই উচিত, না হলে পারিবারিক-সামাজিক যে মূল্যবোধগুলো রয়েছে, সেগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।’
দেশটির নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ এ বিষয়ে বলেছেন, ‘নৈতিকতা থাকা দরকার। কিন্তু সবসময়ে কি তাকে আইন দিয়ে বেঁধে রাখা যায়? পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ হতে পারে? আমার তো মনে হয় না। মন দেওয়া নেওয়া যেকোনো নারী পুরুষের মধ্যেই হতে পারে, তিনি বিবাহিত অথবা অবিবাহিত যাই হোন না কেন। সেটাকে ক্রিমিনালাইজ করা কখনই উচিত নয়।’
তবে আইনজীবী চ্যাটার্জী মনে করেন, বিধানটি একেবারে তুলে দিলে পুরো সমাজে ব্যভিচার বাড়বে। সেটাও অনুচিত হবে। তবে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরকীয়া বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ককে নতুন আইনি দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা উচিত। সূত্র : বিবিসি
আরএস/এমএস