গরু কাটলে হাজারবার জবাই করব
ভারতের উত্তরপ্রদেশের হাপুড় শহরে সন্দেহভাজন গোরক্ষকরা এক মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। ওই হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত গোপন ক্যামেরার সামনে বড়াই করে বলেছেন, যারা গরু কাটবে তাদের হাজারবার জবাই করব। এমন ঘটনার পর পরই সুপ্রিম কোর্ট ওই মামলার শুনানি এগিয়ে এনেছে।
কাসিম কুরেশি ও পহেলু খানকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় দুই অভিযুক্তকেই এনডিটিভির লুকানো ক্যামেরার সামনে বলতে শোনা গেছে তারা কীভাবে হত্যাকাণ্ডে সামিল হয়েছে এবং পুলিশ কেন তাদের কিছু করতে পারবে না।
ভারতের মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, মুসলিমদের পিটিয়ে মারার পরও গোরক্ষকরা যে অনায়াসে পার পেয়ে যাচ্ছেন এই ঘটনায় তাদের সেই অভিযোগই প্রমাণিত হচ্ছে। এ বছরের ১৮ জুন হাপুড়ের কাছে কাশিম কুরেশি ও শামসুদ্দিন নামে দুই ব্যক্তিকে কীভাবে পিটিয়ে মারার ভিডিও দেখে চমকে গিয়েছিল সারা দেশ।
সেই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত যুধিষ্ঠির শিশোদিয়াকে আটক করা হলেও কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি জামিন পেয়ে গেছেন। তিনি এই কাজ আবারও করতে দ্বিধা করবে না বলেও জোর গলায় কথা বলেছেন।
না জানিয়ে তোলা ওই ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গেছে, হাজার বার জেলে যেতে হলেও আমি গরুর ঘাতকদের জবাই করতে দ্বিধা করব না। যে গরু কাটবে, শিশোদিয়া তাকেই কাটবে।
সগর্বে সে আরও জানাচ্ছে, এমন কী জেলে আটক থাকার সময় জেলারকেও নাকি সে বলে এসেছে, মুসলিমরা গরু কাটছিল, তাই আমি ওদের কেটে এসেছি- ব্যাস এ আর বেশি কী?
পিটিয়ে মারার দৃশ্য তার ছেলেরা ভুল করে মোবাইলে ভিডিও করেছে। এমন ভুল আর হবে না বলেও জানিয়েছে ওই ব্যক্তি। আর উত্তরপ্রদেশের বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে পুলিশ যে তার টিকিও ছুঁতে পারবে না, বুক ফুলিয়ে সে কথাও জানিয়েছেন তিনি।
ওই রাজ্যের সাবেক পুলিশ প্রধান বিক্রম বলেন, প্রশাসনের মদতেই যে এই হত্যাকারীরা এত বেপরোয়া। এটা এখন দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে এগুলো কলঙ্কের মতো। পুলিশ-প্রশাসনও যে এই অপরাধে সামিল, তাদের এতে সম্মতি আছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে পরিষ্কার। চলতি বছর পিটিয়ে মারার ঘটনা যে এত বেড়ে গেছে, তা তো অকারণে নয়।
রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা যখন গোরক্ষকদের পাশে নিয়ে ছবি তোলেন, তাদের উৎসাহ দেন তখন পুলিশকে আপনি কী বার্তা দিচ্ছেন সেটাও তো ভাবতে হবে?
লেখিকা ও মানবাধিকারকর্মী ফারা নাকভি ভারতে এরকম পিটিয়ে মারার বিভিন্ন ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করেছেন। তিনি এটাকে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা বলেই মানতে রাজি নন।
নাকভি বলেন, অভিযুক্তরা এই যে গর্ব করে বলছে বেশ করেছি পিটিয়ে মেরেছি, আবার পেটাব। এর মাধ্যমে ভারতীয় সমাজকে তারা এই বার্তাটাই দিচ্ছে যে প্রশাসন আমাদের এইসব কাজ শুধু সহ্যই করবে না, এগুলোতে উৎসাহও দেবে।
এটাকে নিছক আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা বলা যাবে না, কারণ আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে যে এগুলো পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। কাকে নিশানা করা হবে বা কোথায় হামলা চালানো হবে সেগুলো আগেই ঠিক করা থাকে এবং পুলিশেরও এতে যোগসাজশ আছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, এনডিটিভির লুকানো ক্যামেরায় যে কথোপকথন ধরা পড়েছে তা তাদের এতদিনের বক্তব্যকেই সত্যি প্রমাণ করছে।
তিনি বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই বলার চেষ্টা করে আসছি, এগুলোকে যে একটা আচমকা ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত হামলা হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়, ঘটনাটা মোটেও সেরকম নয়।
বরং হামলাকারীরা এখানে খুব ভাল করে জানে যে তাদের কিছুই হবে না এবং তারা রাজনৈতিক সুরক্ষা পাবে। আর বাস্তবেও ঘটে ঠিক তাই। পুলিশও তাদের কিছু বলে না। এ কারণেই আমরা বলছি পরিস্থিতি সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
হাপুরে কাশিম কুরেশিকে পিটিয়ে মারার মামলাটি আগামী সোমবারেই শুনতে রাজি হয়েছেন ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র। তবে মিডিয়ার স্টিং অপারেশনের ভিডিও আদালতে প্রমাণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে কি না তা এখনও স্পষ্ট নয়।
টিটিএন/পিআর