যাদের নাম তালিকায় নেই তারা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী
অাসামের নাগরিক তালিকার চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়া ৪০ লাখ মানুষকে বেআইনি অনুপ্রবেশকারী বলে উল্লেখ করেছেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। ২০১৯ সালের কথা মাথায় রেখে ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন মন্ত্রী বলেছেন চূড়ান্ত তালিকায় নাম তোলার সুযোগ এখনও রয়েছে। তবে সেসব কথার ধারে কাছে না ঘেঁষে স্পষ্টভাবে তিনি বলেছেন, যাদের নাম তালিকায় নেই, তারা অনুপ্রবেশকারী।
কংগ্রেসসহ সব বিরোধী দলের মতে, বিভাজনের রাজনীতি করতে এটা মেরুকরণের তাস। কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি কটাক্ষ করে বলেছেন, কিসের ভিত্তিতে ৪০ লাখ মানুষকে অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করলেন বিজেপি সভাপতি? কিন্তু এর জবাব দেননি অমিত শাহ।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েই বিজেপি ক্ষমতায় এসেছিল। গত চার বছরে অবশ্য মোদি সরকারের মুখে এ নিয়ে কোন কথা শোনা যায়নি। কিন্তু অাসামে ক্ষমতায় আসতে ওই একই অস্ত্র প্রয়োগ করেছিল বিজেপি।
এবার ২০১৯ সালের আগে আস্তিন থেকে পুরনো অস্ত্র বার করলেন বিজেপি সভাপতি। অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে অাসামের মানুষের ক্ষোভ উস্কে দিতে তিনি বলেছেন, লোকে মানবাধিকারের কথা বলে। অসমিয়াদের মানবাধিকার নেই? তাদের রোজগারের সুযোগ যখন অনুপ্রবেশকারীরা কেড়ে নেয়, তখন মানবাধিকারের প্রশ্ন আসে না?
বিজেপি সভাপতির আরও প্রশ্ন, অনুপ্রবেশকারীদের মদদ দিলে দেশের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে? বিরোধীরা বলছেন, বিজেপি সভাপতির এই উস্কানি শুধু অাসামেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। দেশের অন্য রাজ্যেও বাংলাভাষী মুসলিমদের বাংলাদেশি বলে সন্দেহ করা হবে। অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেলে তারা স্থানীয় মানুষের চাকরিতে ভাগ বসাচ্ছেন বলে আঙুল তোলা হবে। আর বিজেপি এই মেরুকরণই চাইছে।
মোদি সরকার যে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে হিন্দুদের আশ্রয় দিতে চায়, মুসলিমদের নয়, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল আগেই। শুধু মুসলিমদের বাদ দিয়ে হিন্দু-বৌদ্ধ-শিখদের শরণার্থী তকমা দিয়ে নাগরিকত্ব দিতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের বিলও এনেছে সরকার।
বিজেপি মুসলিম বাদে বাকি বাংলাদেশিদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিতে চাইলেও নাগরিক তালিকা থেকে বাদ পড়া ৪০ লাখ মানুষের কতজন হিন্দু বা মুসলিম সেই তথ্য এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
মুসলিমদের যে শরণার্থী হিসেবে জায়গা দেওয়ার প্রশ্ন নেই, তা স্পষ্ট করে দিয়ে অমিত শাহ বলেন, যারা নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে, ধর্ম বাঁচাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে আসেন, তারাই শরণার্থী। কিন্তু যে রোজগার বা অন্য কারণে বেআইনি ভাবে ঢোকে সে অনুপ্রবেশকারী। বিজেপির মনে এ নিয়ে কোনও দ্বিধা নেই।
টিটিএন/পিআর