ইমরানের কাছে কতটা প্রত্যাশা করতে পারে ভারত
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হতে এখনও বিলম্ব হলেও এটা মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেছে যে, ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দেশটির সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। জাতীয় পরিষদ এবং পাঞ্জাবের প্রাদেশিক প্রদেশে এগিয়ে আছে ইমরানের দল।
শুক্রবার সকালে ২৫১টি আসনের ফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে পিটিআই ১১০টি আসনে জয়ী হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে হলে পিটিআইকে ১৩৭টি আসনে জয়ী হতে হবে। এখন শুধু কয়েকটি আসনের ফল ঘোষণার অপেক্ষা। এরপরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ইমরানের দলকে জয়ী ঘোষণা করা হবে।
ইমরান খানের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের দল পিএসএল-এনের দল মাত্র ৬৩ আসনে জয়ী হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে জয়ী ঘোষণা না হলেও ইমরানের দলের সমর্থকরা এরই মধ্যে আনন্দ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন সাবেক ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া দেশটির হবু প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
নতুন পাকিস্তান গড়তে নিজের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার পাশাপাশি পররাষ্ট্র নীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেছেন তিনি। চিরবৈরী প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির ইঙ্গিত দিয়ে ইমরান বলেছেন, ‘আমাদের সম্পর্কের সংকটগুলোর সমাধান করতে চাই। এক্ষেত্রে ভারত যদি এক ধাপ এগিয়ে আসে, তাহলে অামরা দুই ধাপ এগিয়ে যাব।’
তবে ভোটের আগে নির্বাচনী প্রচারে ইমরান খান ভারতবিরোধী বেশ কিছু বক্তব্য দিয়েছিলেন। এতে কিছুটা সংশয় তৈরি হলেও নির্বাচনের ফল মোটামুটি নিশ্চিত হওয়ার পরই ভারতের বিরুদ্ধে সুর বদলেছেন তিনি। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি তার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা নিজের ভাষণেই স্পষ্ট করেছেন।
প্রায় ত্রিশ মিনিটের ওই ভাষণে পররাষ্ট্র নীতির পাশাপাশি পিটিআই নেতৃত্বাধীন সম্ভাব্য নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন হবে সে ব্যাপারেও কথা বলেছেন ইমরান। তবে অধিকৃত কাশ্মির ইস্যুতে দুই দেশের সরকারের মাঝে সবার আগে আলোচনা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
‘আমাদের সবচেয়ে বড় সংকট হচ্ছে কাশ্মির নিয়ে। কাশ্মির সম্পর্কে আমাদের কথা বলা প্রয়োজন... ভারত বেলুচিস্তান দেখে, আমরা কাশ্মির দেখি। এই দোষারোপের খেলা বন্ধ করতে হবে।
ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর ও পারস্পরিক সহযোগিতার প্রতি জোর দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তিনি। তবে এবারের নির্বাচনে ইমরানের দলকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ও ভোট কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। ফলে দেশের পররাষ্ট্র নীতি, প্রতিরক্ষা এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নীতিতে আগের চেয়ে আরও বেশি দৃঢ়ভাবে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কাশ্মির ইস্যু নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করছে। একে অপরের ওপর পাল্টা অভিযান এবং হামলা চালিয়ে দু'দেশের মধ্যে তিক্ত অভিজ্ঞতার জন্ম দিয়েছে। ফলে পাকিস্তানের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ভারতকে ভাবিয়ে তুলতে পারে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে গ্রেফতার এবং নির্বাচনের ফলাফল সব কিছু মিলিয়ে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে পাকিস্তানে। এছাড়া সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ থাকায় পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং সেনাপ্রধানের মধ্যকার সম্পর্কেও উত্তেজনা দেখা দিতে পারে।
নওয়াজ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সেনা সমর্থিত রাষ্ট্রের বিরোধীতা করে আসছেন। ফলে গ্রেফতার হওয়ার পাশাপাশি তাদের অত্যাচার এবং নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে। দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত নওয়াজ দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা জেলে দিন কাটাচ্ছেন। একই মামলায় নওয়াজের মেয়ে মরিয়ম নওয়াজ এবং তার স্বামী মুহাম্মদ সফদরকেও সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে ইসলামাবাদ হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিলেন তারা।
কিন্তু সেই আবেদনের শুনানি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় হাইকোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চ। ফলে দেশের সাধারণ নির্বাচনের ভোটের মধ্যে কারাগারেই থাকতে হয়েছে তাদের। নওয়াজকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় ঝড় তোলার পরিকল্পনা করে রেখেছিল তার দল পিএমএল-এন। কিন্তু তা ভেস্তে যায়।
পাকিস্তানের চলমান অর্থনৈতিক সংকটে ইমরানের দল কতটা দক্ষতার পরিচয় দেবে তার ওপরও অনেক কিছু নির্ভর করছে। পাকিস্তানের বেশির ভাগ প্রধানমন্ত্রীই শেষ পর্যন্ত এটা উপলব্ধি করেছেন যে, ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে পারলে দেশের রাজনীতিতে সেনা হস্তক্ষেপ কমতে পারে।
নিজের ঘোষণা অনুযায়ী ইমরান খান যদি পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক স্বাভাবিক পর্যায়ে নিতে পারেন তবে তা দু'দেশের জন্যই বহুল প্রত্যাশিত ঘটনা হবে। তবে বরাবরই পাকিস্তানে বেসামরিক নেতাদের প্রতি প্রত্যাশা ব্যক্ত করে আসছে ভারত। পাক জনগণ বিশেষ করে পাঞ্জাবের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপণে আগ্রহী ভারত।
টিটিএন/এমএস