প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জড়িয়ে ধরলেন রাহুল
নজিরবিহীন সৌজন্যের সাক্ষী হলো ভারতের সংসদ ভবন। তীব্র সমালোচনার পর গোটা সংসদ ভবনকে হতচকিত করে কংগ্রেসের প্রধান রাহুল গান্ধী সংসদের অধিবেশন চলাকালীন আলিঙ্গন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে।
অনাস্থা আলোচনায় ভাষণ দিতে দিতেই আচমকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আলিঙ্গন করেন রাহুল গান্ধী। এমন পরিস্থিতিতে কার্যত হকচকিয়ে যান প্রধানমন্ত্রীও। রাহুলের কড়া সমালোচনার মুখের স্নেহের হাত তার মাথায় বুলিয়ে দেন মোদি।
একাধিক বিষয়ে বিজেপিকে তোপ দাগতে শুরু করতেই বিজেপি সংসদ সদস্যরা তুমুল হট্টগোল জুড়ে দেন। কিছুক্ষণের জন্য মুলতবিও হয় সংসদের কার্যক্রম। তারপর ফের শুরু হয় আলোচনা। ফের শুরু হয় হয় বিশৃঙ্খলা। এর মধ্যেই রাহুল বলতে শুরু করেন, ‘আপনারা আমাকে পাপ্পু বলেন। আমার প্রতি আপনাদের অনেক হিংসা আছে। কিন্তু আমি আপনাদের সবাইকে ভালোবাসি।’ এই বলতে বলতে আচমকাই নিজের জায়গা ছেড়ে হেঁটে চলে যান প্রধানমন্ত্রীর আসনের কাছে। প্রধানমন্ত্রী বসে ছিলেন। ওই অবস্থাতেই রাহুল ঝুঁকে কার্যত জড়িয়ে ধরেন প্রধানমন্ত্রীকে।
এর আগে মোদির উদ্দেশ্যে রাহুল বলেন, ‘চৌকিদার নন, ভাগীদার প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তিনি দেশের চৌকিদার। কিন্তু তিনি আসলে দুর্নীতির ভাগীদার। কারণ বিভিন্ন দুর্নীতির অংশীদার প্রধানমন্ত্রীও।’
রাফাল দুর্নীতি প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, ‘বিজেপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এই চুক্তিতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছেন।’ বারবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর নাম নেয়ায় নির্মলা সীতারামন তীব্র প্রতিবাদ করেন। স্পিকার যদিও বলেন, ‘কংগ্রেস সাংসদের বক্তব্যের পর মন্ত্রীকেও জবাব দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে।’ কিন্তু সেই আর্জিতে বিজেপির সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা কান না দিয়ে তুমুল হট্টগোল শুরু করেন। রাহুলের বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করেন। স্পিকার অল্প সময়ের জন্য অধিবেশন মুলতবি করেন। পরে ফের শুর হয় অধিবেশন।
এদিকে, ভারতের লোকসভায় অনাস্থা প্রস্তাবের শুরুতেই বড়ো ধাক্কা খেলো ক্ষমতাসীন বিজেপি। বেশ কয়েকটি ফোন করে জোটশরিকদের গোস্যা (রাগ) কমানো, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে যে যে দলের সঙ্গে আন্তরিকভাবে তাদের কাছে টেনে নেয়া, এমনকি নিজেদের দলের যেসব সংসদ সদস্য খারাপ স্বাস্থ্যের কারণে লোকসভায় আসতে অপারগ বলে জানিয়েছিলেন, তাদের সঙ্গে কথা বলা- কিনা করেছিল শাসক দল!
তাতেও শেষরক্ষা হলো না! অধিবেশনের শুরুতেই কক্ষত্যাগ করলো বিজেডি। শিবসেনা জানিয়ে দেয়, ভোটদান থেকে বিরত থাকবে তারাও। প্রথম অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিল যে দল, সেই তেলুগু দেশম পার্টি লোকসভায় বিতর্ক শুরু করে প্রথমে। কংগ্রেসের প্রধান বক্তা রাহুল গান্ধী। অন্যদিকে জবাব দেয়ার জন্য থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
আজকের দিনটি আগামী লোকসভা নির্বাচনে মোদির প্রচারের শুরু হিসাবে দেখছে রাজনৈতিকমহল।
তাদের মতে, সংসদ সদস্যদের সংখ্যার নিরিখে এগিয়ে থাকার চেষ্টায় আছে বিজেপি। কিন্তু, বিতর্ক শেষে ভোটে এগিয়ে থাকাই নয়, বিজেপির লক্ষ্য অন্তত দুই-তৃতীয়াংশ আসন নিয়ে জেতা।
এদিকে, বিজেডি ও শিবসেনা ভোটদান থেকে বিরত থাকায় সংসদ সদস্যের সংখ্যা কমে দাঁড়ালো ৪৯৫। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য তাদের দরকরা ২৪৯টি আসন।
এদিন সকালে টুইট করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ‘আজকের বিতর্ক ভারতীয় সংবিধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন।’ অপরদিকে, কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা বলেন, ‘অনাস্থা ভোটের মঞ্চটি কেবলমাত্র সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে নেই। এ সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনাও এর একটি বড়ো উদ্দেশ্য। মানুষকে সত্যিটা জানানোই আমাদের লক্ষ্য।’
বিজেডির কক্ষত্যাগের পর তাদের এক সংসদ সদস্য শথপথি বলেন, ‘একদমই ঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। আমরা বিজেপিকে সাহায্য করছি না।’
অধিবেশনের শুরুতেই গৃহীত হয় তেলেগু দেশম পার্টির আনা অনাস্থা প্রস্তাব। সেটিকে সমর্থন করে কংগ্রেসসহ বিভিন্ন বিরোধী দল। বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের বক্তব্য শোনার পর জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এখন এনডিএ’ র হাতে আছে ৩১২ জন সংসদ সদস্য। ১১টি আসন খালি হওয়ায় এখন সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ৫৩৩। তার মানে সরকার টিকিয়ে রাখতে গেলে প্রয়োজন ২৬৭ সদস্যের সমর্থন। সে ব্যাপারে আত্মবিশবাসী বিজেপি।
এমএআর/এমএস