থাই কিশোরদের উদ্ধারের পর বাবা হারালেন অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক
থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের থ্যাম লুয়াং গুহায় নাটকীয় উদ্ধার অভিযানের পর সবার শেষে বেরিয়ে আসেন অস্ট্রেলীয় এক চিকিৎসক। মঙ্গলবার গুহায় আটকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারের কিছুক্ষণ পর তিনি শুনতে পান, তার বাবা-মারা গেছেন।
অস্ট্রেলীয় এই চিকিৎসক হলেন রিচার্ড হ্যারিস। ছুটিতে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু থাইল্যান্ডের চিয়াং রাই প্রদেশের গুহায় ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচের আটকা পড়ার খবরে নিজ দেশে বসে থাকতে পারেননি তিনি। দ্রুতই পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে। ১৩ বিদেশি ডুবুরি ও পাঁচ থাই নেভি সিলের সমন্বয়ে গঠিত উদ্ধারকারী দলে ছিলেন অ্স্ট্রিলীয় এই চিকিৎসক।
থাইল্যান্ডের গুহা থেকে বেরিয়ে নিজের বাবার মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। তবে তার জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক অ্যান্ড্রু পায়ার্স বলেছেন, তিনি হ্যারির সঙ্গে কথা বলেছেন। পায়ার্স এবিসি নিউজকে বলেন, এটা হ্যারিসের পরিবারের জন্য অত্যন্ত দুঃখের সময়।
তিনি বলেন, হ্যারিস শিগগিরই দেশে ফিরবেন এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছু ভালো সময় কাটাবেন। তবে এই দুঃসময়ে পারিবারিক গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন : অসম্ভব এক মিশনের সফলতার গল্প
সফল অভিযান চালিয়ে উইল্ড বোর টিমের সর্বশেষ গ্রুপকে মঙ্গলবার উদ্ধারের পর থাইল্যান্ড এবং বিশ্বেজুড়ে যখন আনন্দ-উৎসব শুরু হয়; সেসময় গুহার ভেতরে এডিলেডের এই চিকিৎসকসহ আরো তিন ডুবুরি অবস্থান করছিলেন গুহার ভেতরে। বেশ কয়েক ঘণ্টা পর তারা নিরাপদে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
থাই কর্তৃপক্ষের অনুরোধে অস্ট্রেলিয়ার ২০ ক্রুকে পাঠানো হয়েছিল থাইল্যান্ডে; হ্যারি ছিলেন তাদের একজন। তার গত ৩০ বছরের গুহা অভিজ্ঞতার কারণেই ব্রিটিশ ডুবুরিরা হ্যারিসকে থাই গুহার উদ্ধারকাজে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
গুহার ভেতরে প্রবেশের পর ১২ কিশোর ও কোচের স্বাস্থ্য পরীক্ষার তিনিই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কাকে আগে উদ্ধার করা হবে এবং কে বেশিক্ষণ গুহায় থাকতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলি বিশপ বলেছেন, ছেলেদের উদ্ধারের চেষ্টা ছিল অবিশ্বাস্য। যেখানে হ্যারি মূল ভূমিকা পালন করেছেন। উদ্ধার প্রচেষ্টার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন হ্যারিস।
এদিকে, বুধবার থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গুহা থেকে উদ্ধার হওয়া কিশোর ও তাদের কোচের ওজন গড়ে ২ কেজি করে কমেছে। গত ১৭ দিন ধরে গুহায় আটকা থাকায় ওজন কমে গেলে তাদের সবার শারীরিক অবস্থা ভালো আছে।
রোববার প্রথম উদ্ধার হওয়া চার কিশোরের সঙ্গে স্বাক্ষাৎ করেছেন তাদের বাবা-মা। সতর্কতার অংশ হিসেবে দুই মিটার দূরে থেকে সন্তানদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।
থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শক থংচ্যাই লার্তউইলায়ার্যাত্তানাপং বলেন, ‘মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া সর্বেশেষ গ্রুপটির ফুঁসফুঁসে সংক্রমণ হয়েছে। তাদের র্যাবিজ এবং টিটেনাসের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে।
গত ২৩ জুন থেকে গুহায় উইল্ড বোর ফুটবল দলের ১২ কিশোর সদস্য ও তাদের কোচ আটকা ছিলেন। ২ জুলাই ৯ দিনের এক অভিযানের পর দুই ব্রিটিশ ডুবুরি গুহার ভেতরে কিশোর ফুটবল দলের সদস্যদের খুঁজে বের করেন। গুহায় আটকা কিশোরদের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছর।
আরও পড়ুন : থাই নেভি সিলের প্রশ্ন : এটা কী অলৌকিক ঘটনা?
দীর্ঘ প্রায় ৪ কিলোমিটার সংকীর্ণ ও উঁচু-নিচু জলমগ্ন পথ পাড়ি দিয়ে কিশোরদের উদ্ধারে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান শুরু হয় রোববার। প্রথম দিকে থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, গুহায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ও বর্ষা মৌসুমে বর্ষণের কারণে তাদের এখনই উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। আগামী ডিসেম্বর অথবা জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু রোববার নাটকীয়ভাবে বন্যার পানি কিছুটা কমে যাওয়ায় এবং বর্ষণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর উদ্ধার মিশনের প্রধান ও চিয়াং রাই প্রদেশের গভর্নর ন্যারংস্যাক ওসোত্তানাকর্ন জানান, কিশোরদের উদ্ধারে এখনই উপযুক্ত সময়। রোববার প্রথম দফায় চারজন ও সোমবার দ্বিতীয় দফায় চারজনকে উদ্ধার করা হয়। কোচসহ বাকি চারজনকে মঙ্গলবার বের করে আনেন উদ্ধারকারীরা।
চিয়াং রাই প্রদেশের গুহায় আটকা ১২ কিশোর ফুটবলার ও তাদের কোচকে উদ্ধারে ১৩ বিদেশি ডুবুরি ও থাইল্যান্ডের নৌবাহিনীর অভিজাত শাখা থাই নেভি সিলের পাঁচ সদস্য কাজ করেন। এছাড়া গুহার ভেতরে ও প্রবেশ পথে আরো অন্তত ৯০ জন ডুবুরি উদ্ধার তৎপরতায় নিয়োজিত ছিলেন। তবে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে গত শুক্রবার অক্সিজেনের অভাবে থাই নেভি সিলের সাবেক এক সদস্য গুহার ভেতরে মারা যান।
সূত্র : হাফিংটন পোস্ট, ব্যাংকক পোস্ট।
এসআইএস/আরআইপি