কী ঘটছে মেরেকেলের ভাগ্যে?
জার্মানি বিদায় নেয়ার পরও রোববার বিশ্বকাপ ফুটবলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ দেখতে ব্যস্ত ছিলেন জার্মান ফুটবলপ্রেমীরা। তবে প্রায় একই সময়ে তার থেকেও বড় মাত্রার নাটক চলছিল মিউনিখ ও বার্লিনে। সেই নাটকের প্রধান কুশীলব জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল ও বাভেরিয়ায় সিএসইউ দলের নেতা জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার।
শরণার্থী সংক্রান্ত নীতি নিয়ে গত প্রায় এক মাস ধরে দু’জনের মধ্যে সংঘাত চলছে। তার উপর জার্মানির সরকারি জোটের স্থায়ীত্ব, ইউনিয়ন শিবিরের অস্তিত্বের সঙ্গে ইউরোপীয় ঐক্যও অনেকটা নির্ভর করছে। সেহোফার সীমান্ত থেকে অবৈধ শরণার্থীদের বিদায় করতে একতরফা জার্মান নীতি কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর।
অন্যদিকে মেরকেল ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলনে এই প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জন করে ইউরোপীয় স্তরে সমাধানসূত্রের পথে এগোতে চান। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন। কিন্তু মেরকেলের সাফল্য নস্যাৎ করে দিয়ে এখনো নিজের অবস্থানে অনড় রয়েছেন সেহোফার।
তার মতে, মেরকেল কোনো স্পষ্ট পদক্ষেপ নিতে পারেননি, যার মাধ্যমে জার্মানির সীমান্ত থেকে অবৈধ শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো যায়। অতএব তিনি অবিলম্বে জার্মানির একতরফা নীতি কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর। রোববার মিউনিখে সেহোফার অনেক রাত পর্যন্ত দলের নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করে প্রথমে জানালেন, তিনি সব পদ থেকে সরে দাঁড়াতে চলেছেন।
তবে এই সিদ্ধান্ত এখনই কার্যকর করছেন না তিনি। সোমবার বিকালে আরেকবার ম্যার্কেলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। বিতর্কিত অভিবাসন নীতির কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু দুই নেতাই নিজস্ব সিদ্ধান্তে অটল থাকায় এখন মেরকেলের ক্ষমতাসীন জোটের ভাগ্য ঝুলছে রশির ওপর। সেহোফারকে বলি দিয়ে সিএসইউ সরকারে থাকতে পারবে কি-না তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
তবে জোট সরকারে দলের বাকি মন্ত্রীরাও পদত্যাগ করে সরকার অচল করে দিতেও পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যাঞ্জেলা মেরকেল কি চ্যান্সেলর হিসেবে টিকে থাকতে পারবেন? এ বিষয়ে জল্পনা-কল্পনা আপাতত তুঙ্গে। তবে সিডিইউ দল এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধভাবে মেরকেলের পাশে দাঁড়িয়েছে।
সিএসইউ দলের এই কড়া অবস্থান নিয়ে জোরালো বিতর্ক চলছে। এমন ধ্বংসাত্মক নীতির ফলে বাভেরিয়ার আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আখেরে তাদের ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।
কারণ, সে ক্ষেত্রে সিডিইউ দলও বাভেরিয়ায় সিএসইউ’র বিরুদ্ধে প্রার্থী দাঁড় করাতে পারে। অন্যদিকে ফেডারেল স্তরে নির্বাচনে সিএসইউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সিডিইউ দলের ভোট ভাগ হয়ে যেতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে জার্মানির দলীয় রাজনীতির মানচিত্র ব়্যাডিকাল মাত্রায় বদলে যাবার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সেহোফার যে বিষয়টি নিয়ে গোঁ ধরে বসে আছেন, তার কার্যকারিতা নিয়েও সংশয় দেখা দিচ্ছে। যেমন, বাভেরিয়া সীমান্তে কোনো শরণার্থীকে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করলে অস্ট্রিয়া তাকে গ্রহণ করবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন সে দেশের চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুয়র্ৎস।
এছাড়া কার্যক্ষেত্রে অন্য দেশে নথিভুক্ত কোনো শরণার্থীকে চিহ্নিত করে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াও অত্যন্ত জটিল বলে জানিয়েছে জার্মানির ফেড়ারেল পুলিশ।
সোমবার সকালের দিকে সেহোফার বলেছেন, দেশ ও ক্ষমতাসীন জোটের স্বার্থে আমরা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে একটি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমি আশা করছি, আমমরা সমাধানে পৌঁছাতে পারবো।
সূত্র : ডিডব্লিউ, সিএনএন।
এসআইএস/এমএস