ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

‘বিদেশি’ আতঙ্কে আসামের বাংলাভাষীরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ৩০ জুন ২০১৮

চরম আতঙ্কে আছেন ভারতের আসাম রাজ্যে বসবাসরত বাঙলাভাষীরা। সেখানে অবৈধ বিদেশিদের চিহ্নিত ও আটকে চলছে বিশেষ অভিযান। যার প্রধান টার্গেট হচ্ছেন বাঙলাভাষীরা। এতে বহু বৈধ ভারতীয় বাঙালীকেও হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তেমনই একজন ১০২ বছর বয়সী চন্দ্রধর দাস।

শতবর্ষী এই বৃদ্ধকে প্রায় গত মার্চেকে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে আটক করে রাজ্যের পুলিশ। এরপর তাকে রাখা বন্দি শিবিরে হয়।

আসামের বরাক উপত্যকার বাসিন্দা ১০২ বছর বয়সী চন্দ্রধর দাস ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বাংলাদেশ) থেকে ভারতে যান। প্রথমে আশ্রয় নেন ত্রিপুরায়, তারপর আসামের কাছাড়ে। সেই সময়ে জারি করা নাগরিকত্বের সার্টিফিকেটও রয়েছে তার, নাম ছিল ভোটার তালিকাতেও।

জানা গেছে ভারতীয় নাগরিকত্বের একাধিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চন্দ্রধর দাসকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করেছিল একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এরপর পাঠিয়ে দেয়া হয় তথাকথিত 'বিদেশি বন্দী শিবিরে।'

তার আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, বয়সের কারণে কয়েকবার ভোট দিতে যেতে পারেননি তার মক্কেল, তাই তাকে সন্দেহজনক ভোটার বা 'ডি-ভোটার' বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে নির্বাচন কমিশনের ভেরিফিকেশনে দেখা যায় তিনি আসল ভোটার। তাই আবারও তার নাম উঠেছে ভোটার তালিকায়। কিন্তু ওই যে একবার 'ডি-ভোটার' হয়ে গিয়েছিলেন, সেই ভিত্তিতেই পুলিশ তার নামে কেসটা জিইয়ে রেখে দিয়েছিল।

গত মার্চ মাসে পুলিশ তাকে আটক করে। কারণ আসামের বিদেশি ট্রাইব্যুনালের একতরফা রায়ে বিদেশি বলে চিহ্নিত করে। অথচ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পরে যারা ভারতে এসেছেন, তাদেরই শুধু বিদেশি বলে চিহ্নিত করার কথা।

প্রায় তিনমাস পর, বুধবার চন্দ্রধর দাসকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে আদালত।

এ ঘটনার পর চন্দ্রধর দাসের আইনজীবী সৌমেন চৌধুরী একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যেভাবে এই মামলাগুলো হচ্ছে, সম্পূর্ণভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন। রাষ্ট্র যখন কোনো অভিযোগ করবে, তখন রাষ্ট্রেরই দায় সেই অভিযোগ প্রমাণ করার। কিন্তু এই আইনে অভিযুক্তকে আটক করা হবে, আবার তাকেই প্রমাণ করতে হবে যে তিনি আসল ভারতীয় নাগরিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই মানুষটির ভাগ্যক্রমে নথি ছিল, তাই জোরের সঙ্গে তার কেসটা লড়তে পেরেছি। বহু ভারতীয় নাগরিক রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়ছেন হঠাৎ করেই।’

আসামে এখন জাতীয় নাগরিক পঞ্জী হালনাগাদ করার কাজ চলছে, যা ১৯৫১ সালের পর এই প্রথম। একই সঙ্গে বেশ কয়েক বছর যাবত চলছে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে 'বিদেশি' চিহ্নিতকরণের কাজ।

আসামে ছয়টি জেলের ভেতরে তৈরি করা হয়েছে বন্দীশিবির বা ডিটেনশন ক্যাম্প। সেখানে আটক আছেন ৮৯৯ জন। এদের প্রায় সবাই বাংলাভাষী। তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে আটক করা হয়েছে। তথাকথিত এসব বিদেশি বন্দীদের দিয়ে বিনা পারিশ্রমিক কাজ করানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

আব্দুল বাতিন খন্দকার নামে এক মানবাধিকার কর্মী বলেন, ‘বন্দীশিবিরগুলোর জন্য আলাদা কোনো জেল কোড যেমন নেই, তেমনই বিদেশি বলে চিহ্নিত হওয়া ব্যক্তিদের ভবিষ্যৎ কী, সেটাও স্পষ্ট নয়।’

তিনি বলেন, ‘একজনকে আটক করলেন, কিন্তু কতদিনের জন্য আটক করা হচ্ছে, তার কোনো ব্যাখ্যা নেই, কোনো নীতি নেই। সে কি চিরজীবন আটক থাকবে? না কি বিদেশিরা যে দেশ থেকে এসেছেন, অর্থাৎ বাংলাদেশ, সেখানে ফেরত পাঠানো হবে? বাংলাদেশ তো ঘোষণাই করেছে যে আসামে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক নেই। তাহলে তারাই বা ফেরত নেবে কেন?’

বিদেশি হিসেবে চিহ্নিতদের রাখার জন্য আসামে যেসব বন্দীশিবির তৈরি হয়েছে, সেগুলির অবস্থা খতিয়ে দেখতে মানবাধিকার কর্মী হর্ষ মন্দারকে দায়িত্ব দিয়েছিল দেশটির জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তিনি ওই শিবিরগুলি পরিদর্শনের পর যে দুর্বিষহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়েছিলেন, তা মানবাধিকার কমিশন বিবেচনায় নিচ্ছে না, এই অভিযোগে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। সূত্র : বিবিসি

এমএমজেড/পিআর

আরও পড়ুন