ক্ষমতার চার বছর : মোদি কোথায় নিলেন ভারতের অর্থনীতি?
ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শনিবার (২৬ মে, ২০১৮) ক্ষমতার চার বছর পূর্ণ করেছেন নরেন্দ্র মোদি। এই সময়ে তিনি দেশটির সবচেয়ে বৃহৎ কর সংস্কার, শতাব্দী প্রাচীন ব্যাংক আইনে পরিবর্তন, থমকে থাকা শত শত প্রকল্প পুনরুজ্জীবিত করেছেন। মোদির অর্থনীতি বান্ধব বিভিন্ন নীতিমালার কারণে এশিয়ার তৃতীয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হিসেবে ব্যবসার উপযুক্ত পরিবেশ ভারতে রয়েছে বলে স্বীকার করেছে বিশ্বব্যাংক।
তবে এখনো দেশটির অর্থনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব খাত ঝুঁকিমুক্ত নয়। একসময়ের নির্ভরযোগ্য দেশটির রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক জালিয়াতির অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে, ব্যাংকটির ঋণের পরিমাণ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। মার্কিন ডলার শক্তিশালী হওয়ায় শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
মোদির শাসনামলের চার বছরে দেশটিতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আগের চেয়ে গতিশীল হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানা, কর্মসংস্থান তৈরিতে অধিক প্রাধান্য, দুর্নীতির মূল উচ্ছেদ ও দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ভারতের ক্ষমতায় আসে মোদি নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বর্তমান সরকারের মেয়াদ আছে আরো একবছর। এসবের ফল অর্থনীতি, সামাজিক প্যারামিটারে মিশ্র হিসেবে দেখছেন অনেকে।
মোদির নেতৃত্বে দেশটির অর্থনীতির অবস্থা কেমন? তা জানতে চলুন কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক :
মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)
পরিসংখ্যান বলছে, মোদি ক্ষমতায় আসার পর ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, একই সঙ্গে বেড়েছে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)। ২০১৬ সালের নভেম্বরে পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধাক্কা খায়। এ ঘটনার পর ২.৩ ট্রিলিয়ন অর্থনীতির দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধীর গতি দেখা যায়। গত মার্চে ভারতের আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। তবে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষ বসবাস করেন।
ক্ষমতার একেবারে শেষ বছরে পা রেখেছেন মোদি। এ বছরে এসে দেশটির অর্থনীতি গতিশীল হচ্ছে। বিশ্বের সবচেয়ে বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে চীনকে হটিয়ে জায়গা দখল করেছে ভারত।
বাণিজ্য ঘাটতি
সোনার প্রতি ভালোবাসা এবং অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে। আর এটি বেশি বেড়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের শাসনামলে। চীনের সঙ্গে সুসম্পর্ক না থাকলেও দেশটি থেকে ভারতের আমদানির পরিমাণ বেড়েছে এবং এই আমদানি ফুলে-ফেঁপে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে।
আরও পড়ুন : ফেসবুকের প্রধান হতে চান হিলারি!
চলতি হিসাবে ঘাটতি
বর্তমানে চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়েই চলছে ভারত। মোদির বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালার কারণে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ বাড়ায় গত এক দশকের বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো দেশটির অর্থনীতি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সম্প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছে ভারত।
এর ফলে আবারো দেশটির অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে রেকর্ডের জন্য মোদির আরো ডলার প্রয়োজন; আগামী ১০ মাসের মধ্যে ভারতের বিদেশি রিজার্ভ বৃদ্ধিতে যা ভূমিকা রাখতে পারে।
রাজস্ব ঘাটতি
এশিয়ার শীর্ষ রাজস্ব ঘাটতিপূর্ণ দেশগুলোর প্রথমের দিকে রয়েছে ভারতের রাজস্ব ঘাটতি। তবে মোদির সঠিক দিক-নির্দেশনায় রাজস্ব বাজেটের ঘাটতি গত ১০ বছরের মধ্যে কমে এসেছে। প্রথম আর্থিক বছরে অপরিশোধিত তেলের মূল্য দেশটির অর্থনীতিতে ভারসাম্য ধরে রেখেছে।
তবে আগামী বছর দেশটির জাতীয় নির্বাচনের আগে এই ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনা এখন মোদির সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। ভারতের গত জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে। এই বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষিখাতের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু এই প্রস্তাবনার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ফলে রাজস্ব ঘাটতি দেশটিতে আগের মতোই থাকতে পারে বলে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন : মোদিকে ভোট দেবেন ৭১.৯ শতাংশ মানুষ : জরিপ
এদিকে, ভারতে এই মুহূর্তে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দেশটির ৭১.৯ শতাংশ মানুষ ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ভোট দেবেন। দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি চার বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনলাইন জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, গত ২৩ থেকে ২৫ মে দেশটির প্রভাবশালী মিডিয়াগোষ্ঠী টাইমস গ্রুপের ৯টি গণমাধ্যমে একযোগে অনলাইন জরিপ চালানো হয়। ৯ ভাষায় চালানো এই জরিপে অংশ নেয় ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৬ জন।
২০১৯ সালে অর্থাৎ এক বছরেরও কম সময় পর দেশটির লোকসভা নির্বাচন। জরিপে অংশ নেয়া ৭৩.৩ শতাংশ মানুষ বলেছেন, আগামী নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার আবারো ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এই মুহূর্তে লোকসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য সবার পছন্দের শীর্ষে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
সূত্র : ব্লুমবার্গ।
এসআইএস/পিআর