রোহিঙ্গা নিপীড়ন : পাকিস্তানে মিয়ানমার দূতাবাসে হামলার শঙ্কা
রাখাইনের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিপীড়নের জেরে পাকিস্তানে নিযুক্ত মিয়ানমারের দূতাবাস সন্ত্রাসীদের হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এমন তথ্য পাওয়ার পর পাকিস্তানে দূতাবাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে শত কোটি কিয়াট ব্যয় করছে মিয়ানমার সরকার। রোববার মিয়ানমারের ইংরেজি ভাষার দৈনিক দ্য ইরাবতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মিয়ানমারের সহযোগিতাবিষয়ক ইউনিয়ন মন্ত্রী ইউ কিয়াও তিন বলেছেন, ‘দূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলার হুমকির মুখে নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য প্রেসিডেন্টের জরুরি তহবিল থেকে ৩১৯ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন কিয়াট ব্যয় করা হয়েছে ।’
রোহিঙ্গা মুসলিমদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ইসলামাবাদ। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে ওই মাসের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
ওই সময় ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়। তারা ইসলামাবাদের কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত মিয়ানমারের দূতাবাসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে দূতাবাসমুখী মূল রাস্তায় শিপিং কন্টেইনারের ব্যারিকেড তৈরি করে উত্তেজিত জনতাকে অাটকে দেয়া হয়।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের পার্লামেন্টের অধিবেশনে ইউ কিয়াও তিন বলেন, ‘দূতাবাসে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার ঝুঁকির ব্যাপারে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মিয়ানমারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের জাতীয় সন্ত্রাস দমন কর্তৃপক্ষ বলেছে, আমাদের দূতাবাসে সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে।’ কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী বিদেশি কূটনীতিকদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব যে দেশে দূতাবাস অবস্থিত সেই দেশের। দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তানের কূটনৈতিক পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করেছে ইসলামাবাদে নিযুক্ত মিয়ানমার দূতাবাস।
পাকিস্তানের পুলিশ বলছে, তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। একই সঙ্গে দূতাবাস ভবনের বিকল্প হিসেবে অন্য ভবনের ব্যবস্থা করতে এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে দূতাবাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়ছেন মিয়ানমারের এই মন্ত্রী।
আরও পড়ুন : চীনে বন্দিশিবিরে আটকে মুসলিমদের ‘ব্রেনওয়াশ’
এর আগে, ২০১২ সালে রাখাইনে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে তখন জঙ্গিগোষ্ঠী তালেবান ইসলামাবাদে মিয়ানমারের দূতাবাস বন্ধ করতে পাক সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।
গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযান, জ্বালাও-পোড়াওয়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়েছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনা হলেও তা বরাবরই অস্বীকার করেছে দেশটি।
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। সহিংসতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরানোর লক্ষ্যে ডিসেম্বরে দুই দেশের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি।
এসআইএস/এমএস