ধর্ষণে জন্ম নেয়া রোহিঙ্গা শিশুদের খোঁজে দৌড়ঝাঁপ
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর যৌন সহিংসতার শিকার প্রায় ৪৮ হাজার রোহিঙ্গা নারী ও তরুণী চলতি বছরে সন্তানের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। ধর্ষণের শিকার রাখাইনের সংখ্যালঘু এই মুসলিম নারী ও তরুণীদের সেবা দিতে কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে সাহায্য কর্মীদের।
লোক-লজ্জার ভয়ে আত্মগোপনে থাকা এই গর্ভবতী নারী ও তরুণীদের বিশাল শিবিরে সঠিক সময়ে খুঁজে পেতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন বিশেষজ্ঞ এবং রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবীরা। এমনকি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সন্তান জন্মের পর তাদের ছুঁড়ে ফেলা এবং বিনা-চিকিৎসায় নতুন মায়েরা মারা যেতে পারেন বলেও শঙ্কা বাড়ছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থী তোসমিনারা গর্ভবতী নারী ও তরুণীদের জন্য গত কয়েক মাস ধরে কাজ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা তাদের একটি পাসওয়ার্ড বলেছি। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য চৌকিতে পৌঁছানোর পর তারা এই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারবে। তখন সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা গর্ভবতীকে সরাসরি ঠিক জায়গায় পাঠিয়ে দেবেন।
তোসমিনারা বলেন, ‘তারা প্রায় সকলেই লাজুক। অনেক সময় তারা স্বাস্থ্য সেবা নেয়ার জন্য আসতেও ভয় পায়।’
গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। এসময় নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগ উঠে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। তবে ঠিক কতসংখ্যক রোহিঙ্গা নারী ও তরুণী ধর্ষণের কারণে গর্ভবতী হয়েছেন তা এখনো জানা যায়নি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের সহকারী সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু গ্লিমোর বলেন, গত বছরের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে ধর্ষণের শিকার অনেক নারী শিগগিরই মা হবেন।
আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা মেডিসিনস স্যানস ফ্রন্টিয়ারসের (এমএসএফ) মার্সেল্লা ক্রেয়ায় বলেছেন, গর্ভধারণের সঠিক সংখ্যা পাওয়ার প্রত্যাশা ছিল।
শরণার্থী শিবিরে চলতি বছরে প্রায় ৪৮ হাজার সন্তান জন্ম দেবেন। যারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিল তারা শিগগিরই সন্তানের মা হবেন। তবে এদের অধিকাংশই মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে গোপনে অথবা বাঁশের খুপরি ঘরে কোনো ধরনের মেডিক্যাল সহায়তা ছাড়াই কঠিন এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবেন।
রোহিঙ্গা নেতা আব্দুর রহিম বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন; এমন দু’জন নারীকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চিনেন। এ মাসেই তারা সন্তান জন্ম দেবেন। এ ধরনের আরো অনেকেই আছেন বলে তিনি শুনেছেন।
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের (রোহিঙ্গা নারী ও তরুণী) ধর্ষণ করেছে। এই শিশুরাই.... তাদের অপরাধের প্রমাণ।’
সূত্র : এএফপি।
এসআইএস/জেআইএম