মুক্তির পর রাজপ্রাসাদে আনোয়ার ইব্রাহিম
কিছুক্ষণ আগে মুক্তি পেয়েছেন মালয়েশিয়ার সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে তিনি হাসপাতাল (প্রিজন) থেকে বেরিয়ে আসেন।
মুক্তির পর হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি রাজপ্রাসাদে গেছেন। মালয়েশিয়ার রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং আগেই প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে আনোয়ার ইব্রাহিমকে কারা মুক্তির পর সাক্ষাতের জন্য রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
মঙ্গলবার জেল থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। স্থানীয় সময় বুধবার বেলা সাড়ে ১১টায় মুক্তির পর তিনি সরাসরি রাজপ্রাসাদের উদ্দেশে রওনা দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজপ্রাসাদে রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং এর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার কথা আগেই জানিয়েছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল।
এর আগে রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং মঙ্গলবার তাকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এরপর এ বিষয়ে সরকারের সাধারণ ক্ষমাবিষয়ক বোর্ডের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবারই। কিন্তু সেই বৈঠক স্থগিত করা হয় বুধবার সকাল পর্যন্ত। বুধবার সকালে বৈঠকে রাজা ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা নিয়ে আলোচনার পর আনোয়ার মুক্তি পান। এরপরই জেল থেকে বেরিয়ে আসেন আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি ২০১৫ সাল থেকে জেলে রয়েছেন। এ বিষয়ে রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগংয়ের অফিস থেকে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তির সব বিষয়ে সন্তুষ্ট তিনি।
এ বিষয়ে রাজপ্রাসাদের কর্মকর্তা আহমাদ দাহলান বলেছেন, ১৬ মে এ বিষয়টি চূড়ান্ত করার বিষয়ে যে অনুরোধ রাখা হয়েছে তাতে সম্মতি রয়েছে ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগংয়ের। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের সঙ্গে আলোচনা করেছেন উপ-প্রধানমন্ত্রী ও আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী আজিজাহ ওয়ান ইসমাইল।
আনোয়ারের দল পার্টি কেদিলান রাকাইয়াত (পিকেআর) ও তার নিজের আইনজীবী আর সিবারাসা বলেছেন, পরিবারের পক্ষ থেকে আনোয়ার ইব্রাহিমের মুক্তি দাবি করে আবেদন জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, তিনি ভুল বিচারের শিকার হয়ে শাস্তি ভোগ করছেন। এ ছাড়া তার বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, আনোয়ার ইব্রাহিম রাজধানী কুয়ালালামপুরে ছেরাস রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তার কাঁধে একটি অপারেশন হয়েছে। আস্তে আস্তে তিনি সুস্থ হয়ে উঠছেন।
এর আগে আনোয়ার ইব্রাহিমের মেয়ে নুরুল ইজ্জাহকে উদ্ধৃত করে শনিবার জানিয়েছিল, আনোয়ার ইব্রাহিমকে মঙ্গলবারই মুক্তি দেয়া হবে। ওদিকে তিনি মুক্তি পেলেই কি মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হবেন কিনা এমন গুঞ্জনও আছে।
তবে তার স্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী আজিজা বলেছেন, তাকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য কোনো তাড়াহুড়ো নেই। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের ওপর আস্থাশীল।
গত বুধবারের নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপান জোট ২২২ আসনের পার্লামেন্টে ১১৩ আসনে বিজয়ী হয়। এর মধ্যে আনোয়ারের পিকেআর পায় ৪৮ আসন।
এখন মাহাথির প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে তিনিই হবেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী- জোট গড়ার আগে এমনই চুক্তি হয়েছে তাদের মধ্যে। কিন্তু এরই মধ্যে বলা হয়েছে, ক্ষমতার প্রথম দু’বছর দায়িত্বে থাকবেন মাহাথির।
এসময়ে সাধারণ ক্ষমার মাধ্যমে আনোয়ারকে তিনি মুক্তি দেবেন। একটি আসনে উপ-নির্বাচনে তাকে বিজয়ী করে আনবেন। তারপর তার হাতে ক্ষমতা তুলে দেবেন। আনোয়ার ইব্রাহিমের বয়স এখন ৭০ বছর। সমকামিতার অভিযোগে ২০১৫ সালে তাকে ৫ বছরের জেল দেয়া হয়। এ অভিযোগকে তিনি তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ধ্বংসের জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেন।
এমবিআর/আরআইপি