কক্ষপথে পৌঁছেছে লাল সবুজের বঙ্গবন্ধু-১
বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর উৎক্ষেপণের সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে মহাকাশপানে উড়াল দেয় বঙ্গবন্ধু-১।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ৩টা ৪৭ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড-৩৯ এ থেকে কক্ষপথে উড়াল দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও শেষ মুহূর্তে গ্রাউন্ড সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়ায় তা বাতিল করা হয়।
পুনর্নিধারিত সময়ে ফ্যালকন-৯ রকেটের নতুন সংস্করণ ব্লক ফাইভ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটকে নিয়ে রওনা হয় নিজস্ব কক্ষপথে। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টারের লঞ্চ প্যাড ৩৯ এ থেকে মহাকাশের বুকে লাল সবুজের পদচিহ্ন আঁকতে ছুটে চলছে বঙ্গবন্ধু-১।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স সফল উৎক্ষেপণের খবর দিয়ে টুইটে বলেছে, স্যাটেলাইটের প্রথম ধাপের পাশাপাশি দ্বিতীয় ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া ফ্যালকন-৯ রকেট ইতোমধ্যে ভূপৃষ্ঠে ফিরে এসেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ৪৭ মিনিটে সফলভাবে কক্ষপথে পৌঁছেছে বঙ্গবন্ধু-১।
এর আগে, বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে এক টুইট বার্তায় স্পেসএক্স জানায়, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের উৎক্ষেপণে ফ্যালকন ৯ এর সব সিস্টেম ভালো রয়েছে। আজ উৎক্ষেপণের জন্য আবহাওয়া ৭০ শতাংশ অনুকূলে রয়েছে।
প্রথম চেষ্টায় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ব্যর্থ হওয়ার পর মার্কিন মহাকাশ অনুসন্ধান ও প্রযুক্তি সংস্থা স্পেসএক্সের ইঞ্জিনিয়ার মাইকেল হ্যামারসলি বলেছিলেন, ‘উৎক্ষেপণ বাতিল করাটা মানসম্মত প্রক্রিয়ার একটি অংশ। এটা নিশ্চিত করা ভালো যে, ফ্যালকন ৯ উড়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। গ্রাউন্ড এবং ভেহিকল সিস্টেম ভালো রয়েছে। উৎক্ষেপণের সময় কোনো সমস্যা এড়ানোর জন্য ডাবল চেকিং বেশি গ্রহণযোগ্য।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪মিনিট থেকে পরবর্তী দুই ঘণ্টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণের কাজ আবারো শুরু হয়। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ দেখার অপেক্ষায় ছিল আজ পুরো দেশ ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। গত ২৮ মার্চ (বুধবার) কানের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস প্ল্যান্ট ত্যাগ করে স্যাটেলাইটটি। পরে স্যাটেলাইট বহনকারী কার্গো বিমান অ্যানতোনোভ নাইস বিমানবন্দর থেকে ২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।
ওই দিন ফ্রান্সের স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে ৮টার মধ্যে বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে। ২৯ মার্চ বোস্টনে যাত্রাবিরতির করে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বহনকারী কার্গোবিমান। ৩০ মার্চ এটি ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল পৌঁছায়।
২০১৫ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন-বিটিআরসি ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ নির্মাণের জন্য ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে চুক্তি সই করে। ওই বছর মূল স্যাটেলাইট তৈরির কাজ শুরু হলেও এর প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে।
বঙ্গবন্ধু-১ মহাকাশে পাঠানোর লক্ষ্যে রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাশিয়ার কাছে থেকে মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারে (বাংলাদেশি প্রায় ২১৯ কোটি টাকায) কেনা হয় এ স্লট। দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উড়বে এখানেই।
স্যাটেলাইটটি পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগবে। সম্পূর্ণ চালু হওয়ার পর এর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের গ্রাউন্ড স্টেশনে হস্তান্তর করা হবে। গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি গ্রাউন্ড স্টেশনের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
এসআইএস/এমআরএম