ভারতে অবৈধ বাংলাদেশিদের ওয়ার্ক পারমিটের প্রস্তাব
আসামে আর কয়েক মাসের মধ্যেই চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা প্রকাশিত হওয়ার কথা। যা থেকে বেশ কয়েক লাখ মানুষের বাদ পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আর তাদের বেশির ভাগই বাঙালি মুসলিম।
আসাম এদের অবৈধ বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নিত করলেও বাংলাদেশ তাদের নিতে প্রস্তুত নয়। আর দু’দেশের মধ্যে কোনও প্রত্যাবাসন চুক্তিও নেই। ফলে এই লাখ লাখ তথাকথিত অবৈধ বিদেশিকে নিয়ে কী করা হবে তা নিয়ে দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর গত সপ্তাহেই আলোচনা হয়েছে।
ঐ বৈঠকে একাধিক মুখ্যমন্ত্রী লাখ লাখ অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধভাবে কাজের সুবিধা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছেন। মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বিবিসিকে জানান, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠকে দেশের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।
কনরাড সাংমা বলেন, এই ইস্যু অ্যাড্রেস করার জন্য একটা মেকানিজম লাগবেই। ফলে আমরা কেউ ইনার লাইন পারমিট, কেউ ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলেছি। অবশ্য প্রতিটা প্রস্তাবেরই নানা সুবিধা-অসুবিধা আছে। কিন্তু এটা যে উপেক্ষা করা যাবে না তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
এমনকি বিষয়টি মোকাবেলার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা দরকার বলেও মনে করছেন তিনি। সাংমা বলেন, ওই অঞ্চলের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থেই প্রয়োজনে নিয়মকানুনের কিছু পরিবর্তন করেও এই বিপুল সংখ্যক লোককে ওয়ার্ক পারমিট বা এ ধরনের কিছু দেওয়ার কথা ভাবা যেতে পারে।
ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বোর্ডের সাবেক সদস্য ও বিএসএফের প্রাক্তন মহাপরিচালক প্রকাশ সিংও মনে করছেন, ওয়ার্ক পারমিট হল দু’টো চরম রাস্তার মধ্যে একটা মাঝামাঝি সমাধান।
তিনি বলেন, একটা রাস্তা হল এই লোকগুলোকে ছুঁড়ে ফেলা, যা অবশ্যই নিষ্ঠুর ও মানবাধিকারের দৃষ্টিতে আপত্তিজনক। আর একটা রাস্তা হল ঠিক আছে তোমরা বিদেশি, থাকছ থাক- আমরা কিছুই করলাম না। এটা দেশের সার্বভৌমত্বের সঙ্গে আপস করা।
কিন্তু এই দু’টোর মাঝে একটা মধ্যপন্থা হতে পারে বিদেশি হিসেবে এদেশে দু’বছর বা তিন বছর ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে কাজ কর, থাকো আর মেয়াদ ফুরালে ফিরে যাও! কিন্তু এখানে প্রশ্ন হল, ওয়ার্ক পারমিটের সময় শেষ হলে তারা যাবে কোথায়?
আসামের সিভিল সোসাইটি অ্যাক্টিভিস্ট ও অর্থনীতিবিদ জয়দীপ বিশ্বাস বলেন এই প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। অধ্যাপক বিশ্বাস বলেন, প্রস্তাবটা পুরনো, এক সময় প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীও এই ওয়ার্ক পারমিট দেওয়ার কথা বলেছিলেন। এমনিতে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য সারা বিশ্বেই ওয়ার্ক পারমিট স্বীকৃত একটি পন্থা। কিন্তু আসামের ব্যাপারটা একেবারেই স্বতন্ত্র।
তিনি বলেন, সাতচল্লিশ বছর ধরে যিনি এ রাজ্যে আছেন, যার নাম ভোটার তালিকাতেও আছে-আমি রাতারাতি তার নাগরিকত্বের দাবি খারিজ করে দিয়ে হাতে একটা ওয়ার্ক পারমিট ধরিয়ে দিলাম, এটা তো সম্পূর্ণ বেআইনি।
জয়দীপ বলেন, ধরা যাক নাগরিক তালিকা থেকে পাঁচ লাখ মানুষ বাদ পড়লেন। এখন এই পাঁচ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলে তারা কিন্তু রাষ্ট্রহীন নাগরিকেও পরিণত হবেন। বিশ্বের একটি অন্যতম বৃহৎ ও দায়িত্বশীল গণতন্ত্র হিসেবে ভারত কিছুতেই এতগুলো লোককে রাষ্ট্রহীন বানাতে পারে না ... সেটা অন্যায়, অনৈতিক ও অবৈধ।
টিটিএন/পিআর