ভারতের প্রধান বিচারপতিকে অপসারণের প্রস্তাব
ভারতের প্রধান বিচারপতিকে সংসদীয় বিচারের মাধ্যমে অপসারণ চেয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো রাজ্যসভায় একটি প্রস্তাব পেশ করেছে। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অসদাচরণসহ আরও বেশ কিছু অভিযোগও আনা হয়েছে।
সংসদের উচ্চ-কক্ষে দেওয়া এই পিটিশনে সাতটি রাজনৈতিক দলের ৬৪ জন এমপি স্বাক্ষর করেছেন। রাজ্যসভায় অভিশংসনের প্রস্তাব আনতে গেলে নূন্যতম ৫০ জন এমপির স্বাক্ষর লাগে। তবে লোকসভায় ওই একই প্রস্তাব আনতে হলে ১০০ জন সংসদ সদস্যকে সাক্ষর করতে হয়।
এর আগে ভারতের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে কখনও অভিশংসনের প্রস্তাব আনা হয়নি। সেদিক থেকে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যদিও অতীতে বেশ কয়েকজন বিচারপতিকে অভিশংসন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু তারা ওইসব প্রস্তাব পাশ হওয়ার আগেই ইস্তফা দিয়েছেন।
দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, কোন মামলা কোন বেঞ্চে যাবে সেটি নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি স্বেচ্ছাচার করেছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে বিচারপতি হওয়ার আগে তিনি যখন উড়িষ্যা হাইকোর্টে আইনজীবী ছিলেন, সেই সময়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি জমি নিয়েছিলেন।
গত জানুয়ারি মাসে সুপ্রিম কোর্টের চারজন প্রবীন বিচারপতি দীপক মিশ্রর বিরুদ্ধে স্বৈরাচারী আচরণের অভিযোগ আনার পর তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়।
ওই চার বিচারপতি মিশ্রর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনেন যে, কোন মামলার বিচার কোন বেঞ্চে করা হবে সেটি ঠিক করতে গিয়ে তিনি তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। দীপক মিশ্র ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন গত অাগস্টে। আগামী অক্টোবরে তার অবসরে যাওয়ার কথা। ভারতে প্রধান বিচারপতির বয়স ৬৫ হলে তার অবসর নেওয়া বাধ্যতামূলক।
অভিশংসনের বিষয়ে দীপক মিশ্রর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করবেন না।
যেসব এমপি পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন তারা বিরোধী কংগ্রেস পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া এবং উত্তর প্রদেশের প্রভাবশালী দল সমাজবাদী পার্টিসহ আরো চারটি রাজনৈতিক দলের সদস্য।
এই পিটিশনের উপর আলোচনা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এবং নরেন্দ্র মোদি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইড়ু। কংগ্রেস পার্টির নেতা কপিল সিবাল বলেন, আমরা আশা করছি বিচারপতিরা তাদের যেসব ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সেগুলো দেখা হবে। তাদের বিবৃতির তিন মাস পরেও প্রধান বিচারপতি যেহেতু বিচার বিভাগে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেননি সে কারণে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এটা করা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র ততক্ষণ কাজ করবে যতক্ষণ আমরা বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের হাত থেকে মুক্ত রাখতে পারবো। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে সংসদের দু’কক্ষে অনুমোদনের পরেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিকে অভিশংসন করা সম্ভব। তবে অপসারণের চূড়ান্ত নির্দেশ দেবেন প্রেসিডেন্ট।
রাজ্যসভা ও লোকসভা-সংসদের এই দু’কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন লাগবে। লোকসভায় নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি ও তার মিত্র দলগুলোর সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও উচ্চকক্ষে সেটা নেই। ফলে এই প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলেই মনে করছেন অনেকে।
টিটিএন/এমএস