মাদক ও যৌনতায় জড়াচ্ছে কলকাতার নামীদামি স্কুলের ছাত্রীরা
মাদক ও যৌনতাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক চক্রে জড়িয়ে পড়ছে কলকাতার বিভিন্ন নামীদামি স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সেখানকার নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) গোয়েন্দারা সোমবার এমন এক চক্রের মূলহোতাসহ একাধিক সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তে উঠে আসছে আরও সব মারাত্মক তথ্য।
বেশ কয়েক বছর ধরেই শহরের অভিজাত পার্টিগুলিতে মাদক ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সেখানে এলএসডি, এমডিএমএ -এর মতো মাদকের বহুল ব্যবহারের কথাও শোনা যায়। কিন্তু সেই মাদক সরবরাহের পাশাপাশি এই চক্রটি শহরের বিভিন্ন জায়গায় ‘এসকর্ট সার্ভিস’-এর ব্যবসাও করতো। জিজ্ঞাসাবাদে এসব কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, তাদের ফাঁদে ধরা পড়েছেন দিব্যেন্দু রায় নামে এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী এবং তার সঙ্গী প্রশান্ত বাসনেট। আটককৃতদের মধ্যে দুই তরুণীও রয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, দিব্যেন্দুই ছিলেন এই চক্রের মূল হোতা। আর ওই তরুণীরা কলকাতার একটি নামকরা ইংরেজি মাধ্যমিক স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
গোয়েন্দারা জানান, বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতার এলএসডি, এমডিএমএ-র মতো পার্টি ড্রাগ আমদানি করতেন দিব্যেন্দু। আটককৃতদের কাছ থেকে ১৯টি এলএসডি ব্লট এবং আড়াই কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, মূলত ধনী পরিবারের ছাত্র-ছাত্রীরাই এই মাদকের মূল ক্রেতা। আটককৃতদের মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়।
শহরের অভিজাত পার্টিতে মাদক পাচারের দায়ে আটককৃত এক তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে ওই তরুণী জানান, তার বয়স মাত্র ১৯ বছর। কিন্তু মাসে রোজগার কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা! অভিজাত পার্টিতে মাদকের মৌতাতের সঙ্গে যৌনতার পসরাও পৌঁছে দিতেন তিনি। শুধু কলকাতার অভিজাত পার্টি সার্কেল নয়, তার পসরা পৌঁছাতো দিল্লি, রাঁচি, খড়গপুরেও। ব্যবসায়ী, শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মাঝারি মাপের অভিনেতারাও রয়েছেন ওই তরুণীর মক্কেলের তালিকায়।
ট্যাংরায় বিবাহবিচ্ছিন্না মাকে নিয়ে থাকেন ওই তরুণী। এক সময় কলকাতারই একটি নামকরা স্কুলের ছাত্রী ছিলেন তিনি। সেখানেই পরিচয় হয় আটক অন্য তরুণীর সঙ্গে। দ্বিতীয় তরুণী বড় হয়েছেন বেলগাছিয়াতে। ছোটবেলাতেই বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ। ধীরে ধীরে বন্ধুদের হাত ধরে মাদকে হাতেখড়ি। বাবা-মা দুজনেই বিউটি পার্লারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। দু’জনের কাছ থেকেই টাকা পান। তাই পকেটমানির অভাব নেই। এলএসডি, এমডিএমের মতো পার্টি ড্রাগ নিতে নিতে ধীরে ধীরে জড়িয়ে যান মাদক ব্যবসায়।
চক্রের সন্ধান পেতে তাকেই টার্গেট করেছিলেন গোয়েন্দারা। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকারোক্তি দেন- পাঁচতারকা হোটেল, আলিপুরের পার্টিতে এসকর্ট হিসেবে যাতায়াত ছিল তার। পরিচিত এই পার্টি সার্কিটেই পৌঁছে দিতেন মাদক। কয়েকটি ডেটিং সাইটের মাধ্যমে নতুন মক্কেলদের কাছেও যেতেন তিনি। মাদক বিক্রির লাভের পাশাপাশি এসকর্ট হিসেবে প্রতি রাতে তার রোজগার ছিল ২০ হাজার টাকা।
ওই দুই তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও একটি বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। কলকাতার বিভিন্ন নামকরা স্কুল ও কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন কিছু ছাত্রছাত্রী রয়েছে এই মাদক ক্রেতাদের মধ্যে প্রথম সারিতে।
এনসিবির আঞ্চলিক পরিচালক দিলীপ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে জানিয়েছি। সেখানে আমরা কাউন্সেলিং করবো।’
আটককৃত তরুণীদের কাছ থেকেই সন্ধান মেলে চক্রের মূল হোতা লেকটাউনের বাসিন্দা দিব্যেন্দু রায়ের। তথ্য-প্রযুক্তি কর্মী দিব্যেন্দু বেঙ্গালুরু থেকে এই মাদক আনতেন। এর পর তার সঙ্গী প্রশান্ত বাসনেট এবং বাকিদের মাধ্যমে পৌঁছে দিতেন বিভিন্ন পার্টিতে। ২০১৫ সালে বেঙ্গালুরু থাকাকালীন মাদক পাচার করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন দিব্যেন্দু।
আটককৃতদের সকলেরই একটি বিষয়ে মিল আছে। প্রত্যেকেরই বাবা-মা বিবাহবিচ্ছিন্ন। পারিবারিক এই কারণ কি এই তরুণ-তরুণীদের ড্রাগ আর সেক্সের অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে? এমন আশঙ্কা বিশ্লেষকদের।
সূত্র : আনন্দবাজার
এমবিআর/পিআর