সিরিয়ায় পশ্চিমা ক্ষেপনাস্ত্র হামলার পর আসাদ এখন কোথায়?
সিরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের যৌথ বিমান হামলার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন থাকে যে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ কোথায়? কেমন আছেন তিনি?
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে টুইটারে পোস্ট করা ছয় সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট আসাদ হাতে একটি ব্রিফকেস নিয়ে মার্বেলের তৈরি মেঝের ওপর দিয়ে হেঁটে বড় একটি ঘরে প্রবেশ করেছেন।
সেটিকে প্রেসিডেন্টের অফিস হিসেব দাবি করা হচ্ছে। সে সময় আসাদ কালো স্যুট পরিহিত ছিলেন। তবে সে ভিডিওতে প্রেসিডেন্ট আসাদের চেহারা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল না।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, হামলার পর সকালে প্রেসিডেন্ট আসাদ তার অফিসে এসেছিলেন এবং এ ভিডিওটি সে সময় ধারণ করা হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, মিসাইল হামলার পর সকালে দামেস্কের রাস্তা অন্যান্য দিনের মতোই ব্যস্ত ছিল। শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিগুলো অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে ছিল। অন্যান্য দিনের মতো কড়াকড়ি ছিল না। দোকানপাট যথারীতি খুলেছে এবং মানুষজন তাদের কাজে গিয়েছে। দামেস্ক শহরের কেন্দ্রস্থলে সিরিয়ান টেলিভিশন ভবনের সামনে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়েছে। তারা সিরিয়া, সেনাবাহিনী এবং প্রেসিডেন্ট আসাদের পক্ষে শ্লোগান দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, ডেনাল্ড ট্রাম্পের ভয়ে তারা ভীত নন এবং কোন অবস্থাতে সিরিয়ার সেনাবাহিনী এবং বাশার আল আসাদের প্রতি তাদের সমর্থন যাবে না।
মিসাইল হামলা চালানোর পরে প্রথম প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ জানিয়েছেন, এর ফলে সিরিয়ার মানুষ সন্ত্রাসবাদ শেষ করতে আরও বদ্ধপরিকর হয়ে উঠবেন।
প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে টুইট করে জানানো হয়েছে, এই হামলার পরে সিরিয়া এবং সেখানকার নাগরিকরা দেশের প্রতিটি ইঞ্চি থেকে সন্ত্রাসবাদকে ধ্বংস করতে আরও বদ্ধপরিকর হয়ে উঠবে।"
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে এক টেলিফোন-বার্তায় বাশার আল আসাদ এই মন্তব্য করেন বলে জানানো হয়েছে তার দপ্তরের টুইট অ্যাকাউন্ট থেকে।
প্রেসিডেন্ট আসাদ এই অভিযোগও করেছেন, পশ্চিমা দেশগুলি সিরিয়াতে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন যোগাচ্ছে।
অন্যদিকে, ইরানি প্রেসিডেন্ট রুহানি ওই টেলিফোন বার্তার সময়েই সিরিয়ার প্রতি আবারও ইরানের পূর্ণ সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন বলে দাবী করা হয়েছে ওই টুইট বার্তায়।
শনিবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতোল্লা খামেনির সঙ্গে এক বৈঠকে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি সিরিয়ার ওপরে আজ ভোরের হামলার নিন্দা করেছেন।
‘মৃত্যু আর ধ্বংস ছাড়া মধ্য প্রাচ্যে মার্কিন হামলার অন্য কোনও ফল হবে না। এই হামলার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের উপস্থিতির স্বপক্ষে যুক্তি তৈরি করতে চেয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলি,’ মন্তব্য রুহানির।
সিরিয়ায় আসাদের সরকারকে ইরান সৈন্য এবং অর্থ দিয়ে সাহায্য করছে বলে মনে করা হয়।
পশ্চিমা মিসাইল হামলা যে সিরিয়ায় বিশেষ কোনও প্রভাবই ফেলতে পারে নি, তা প্রমাণ করার জন্য একদিকে যেমন প্রেসিডেন্টের দপ্তর থেকে একটি ছোট্ট ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, তেমনই দামেস্ক-এর রাস্তায় নেমে এসেছেন বহু মানুষ।
এদের হাতে রয়েছে সিরিয়ার পতাকা আর প্রেসিডেন্ট আসাদের ছবি। গাড়িতে চেপে তারা পতাকা নাড়াতে নাড়াতে যাচ্ছেন। আবার সামরিক পোশাক পরিহিত পুরুষ ও নারীদেরও হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উল্লাস করতে দেখা যাচ্ছে।
তবে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিরাশ সিরিয়ান বিদ্রোহীরা। সিরিয়ার আসাদ বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি আশা করেছিল, এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সিরিয়ার সরকারী বাহিনী যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তাতে অন্তত একজন বিদ্রোহী নেতা মুহাম্মদ আলাউশ এই পশ্চিমা ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে গুরুত্ব দিতেই নারাজ।
তিনি বলেছেন, মিসাইলগুলো 'অপরাধের সরঞ্জামের ওপরে আঘাত হেনেছে - কিন্তু পেছনে থাকা অপরাধীকে নয়।’
প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে শাস্তি দিতে একযোগে সিরিয়ায় হামলা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও ব্রিটেন। দেশটির বেসামরিক নাগরকিদের ওপর সরকারি বাহিনীর রাসায়নিক হামলার অভিযোগ এনে পশ্চিমা বিশ্বের হামলায় এখন পর্যন্ত শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র সিরীয় ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ছোঁড়ার দাবি করা হয়েছে।
তবে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অন্যতম মিত্র রাশিয়ার সেনাবাহিনী বলছে, পশ্চিমাদের ছোঁড়া ১০৩ টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের ৭১টিই ভূপাতিত করেছে সিরিয়ায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।
সূত্র: বিবিসি
এসআর/পিআর