ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য : সৌদি যুবরাজ
ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য যুদ্ধের ব্যাপারে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়েছেন সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি বলেছেন, ‘এই অঞ্চলে এবং বিশ্ব পরিমণ্ডলে ইরানের অপকর্ম বন্ধে যদি শিগগিরই ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে দেশটির সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য।’
ইরানকে দমন করতে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সৌদি এই যুবরাজ বলেন, ‘আমরা যা করার চেষ্টা করছি তাতে যদি সফল না হতে পারি, তাহলে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে ইরানের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ হতে পারে।’
বর্তমানে তিন সপ্তাহের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। সফরে সৌদি আরবের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সহযোগিতা বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেছেন তিনি।
ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সৌদি যুবরাজ। মোহাম্মদ বিন সালমানের উত্থানের পর ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি। অারব রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক কমিয়ে আনতে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসছেন তিনি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে ২০১৫ সালে তেহরানের সঙ্গে ছয় বিশ্ব শক্তির পারমাণবিক চুক্তির পর দেশটির ওপর থেকে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরপর থেকে ইরানে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে।
অর্থনৈতিক অভাবনীয় উন্নয়নের কারণে দেশটির রিজার্ভও বেড়েছে; যার ফলে ওই অঞ্চলে ইরানের যুদ্ধের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি ইরাক, সিরিয়া, লেবানন ও ইয়েমেনের শিয়া মিলিশিয়াদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে ইরান। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় ইয়েমেনে প্রক্সি যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হয়েছে সৌদি আরব; যা গত সপ্তাহে তৃতীয় বছরে পদার্পন করেছে।
গত সপ্তাহে সৌদি আরবে সাতটি ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরব এবং ইরান পরস্পরবিরোধী শক্তিকে সমর্থন দিয়ে আসছে। যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বলেন, ‘ইয়েমেনে হস্তক্ষেপ ব্যর্থ হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের সৃষ্টি হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ২০১৫ সালে দেশটিতে হস্তক্ষেপ না করতাম, তাহলে হুথি এবং আল-কায়েদায় বিভক্ত হতো ইয়েমেন।’
গত সপ্তাহে ওয়াশিংটনে যুবরাজ মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওই বৈঠকে তিনি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়েছেন। ওই চুক্তির ঘোরবিরোধী হিসেবে পরিচিত নতুন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পে ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনকে প্রশাসনের শীর্ষে নিয়ে এসেছেন ট্রাম্প।
ওই পারমাণবিক চুক্তিকে এ যাবৎকালের ‘সবচেয়ে জঘন্য চুক্তি’ আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট।
গত বছরের ৫ জুন কাতারের সঙ্গে একযোগে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিসর। মিসরের রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডসহ সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়া ও ইরানের সমর্থনে চরমপন্থা বিস্তারের অভিযোগ এনে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট।
সূত্র : গালফ নিউজ।
এসআইএস/জেআইএম