সিরিয়া-ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধের আশংকা
সিরিয়া-ইসরায়েলের মধ্যে বিরোধ অনেক পুরনো। দু'দেশের মধ্যে অনেকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। তবে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সুযোগে সেখানে প্রভাব বাড়ছে ইরান আর হিজবুল্লাহ সংগঠনের। যা উদ্বিগ্ন করে তুলেছে ইসরায়েলকে।
সম্প্রতি সেখানে পরস্পরের বিমান ভূপাতিত করার মতো ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু সেখানকার এই উত্তেজনা আরো বড় আকারে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এক দশক আগেও পূর্ব সিরিয়ার আকবর সামরিক কেন্দ্রে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি যুদ্ধ বিমান। এতবছর ধরে তা অস্বীকার করার পরে এখন তারা স্বীকার করে নিয়েছে দেশটি। সেখানে একটি পারমানবিক চুল্লি ছিল বলে মনে করা হতো।
ইসরায়েলি চিফ অফ স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল গ্যাডি আইজেনকট বলছেন, ২০০৭ সালে সিরিয়ায় ওই হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে এই বার্তা দেয়া যে, ইসরায়েল এই অঞ্চলে এমন কোন কর্মকাণ্ড সহ্য করবে না যা আমাদের দেশের অস্তিত্বকে হুমকিতে ফেলতে পারে।
১৯৯৮ সালে আমরা যখন ইরাকের আণবিক কেন্দ্রে বোমা হামলা চালাই তখনও এই বার্তাই দিতে চেয়েছি। ভবিষ্যতেও আমাদের শত্রুদের এই বার্তাই দেয়া হবে। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যে, সিরিয়ায় নানা কর্মসূচীর সঙ্গে ইরানের যোগাযোগ রয়েছে। ইরানের সহায়তা সিরিয়া আণবিক অস্ত্র বানাতে পারে বলে ইসরায়েলের আশংকাও বেড়েছে।
সম্প্রতি সিরিয়ায় সরকারি এবং ইরানি লক্ষ্যবস্তুতেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বিষয়ক একটি সাময়িকীর বিশ্লেষক অ্যামে সারেল বলেন, সাত বছর ধরে সিরিয়ার সংঘাত থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেছে ইসরায়েল, কিন্তু তারাও জড়িয়ে পড়ছে।
তিনি বলেন, এখন যুদ্ধের ভিন্ন একটা অধ্যায় শুরু হয়েছে। সত্যি কথা বলতে, আসাদ সরকার এই যুদ্ধে জয়ী হতে চলেছে। কিন্তু যারা আসাদকে জয়ী হতে সহায়তা করেছে, তারা ইসরায়েলের জন্য হুমকি হতে পারে। বিশেষ করে এই অঞ্চলে ইরানের উপস্থিতি বাড়ছে, তাদের মিলিশিয়ারা নানা ঘাঁটি তৈরি করে থাকছে। ইসরায়েলের জন্য আরেকটি বড় হুমকি হতে পারে হিজবুল্লাহ।
সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে মিলে বিদ্রোহী বাহিনী এবং ইসলামিক স্টেট গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই করছে হিজবুল্লাহ। যুদ্ধে তারা শত শত যোদ্ধাও হারিয়েছে। তবে যোদ্ধা হারালেও এই যুদ্ধে হিজবুল্লাহর সামরিক শক্তি আসলে অনেক বেড়েছে।
হিজবুল্লাহ তাদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করেই চলেছে এবং নতুন নতুন অস্ত্র ব্যবহারের চেষ্টা করছে। সিরিয়ার যুদ্ধে তারা তাদের সব রকম শক্তি ব্যবহার করেই অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করছে। তারা সেখানে অন্য ছোট সংগঠনগুলোকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে, যারা সিরিয়ায় তাদের প্রভাব বিস্তারে দীর্ঘদিন কাজ করবে।
আর এটাই ইসরায়েলকে সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে সিরিয়ায় সাম্প্রতিক এসব হামলায়। এর আগেও তারা অনেকবারই সিরিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, ইরান যাতে হিজবুল্লাহকে শক্তিশালী করতে না পারে, তাই তাদের এসব পদক্ষেপ। যদিও হিজবুল্লাহ নেতা শেখ নাইম কাসেম একে যুদ্ধ হিসাবেই নিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, যে কোনো হামলা ঠেকাতে হেজবুল্লাহ সব সময়ই প্রস্তুত আছে। যদি ইসরায়েল কখনো সে রকম ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে তার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে। তবে আমার মনে হয়না, তারা একটি যুদ্ধে জড়ানোর মতো অবস্থায় আছে। তবে বিপদ লুকিয়ে আছে নানা ঘটনার মধ্যে।
ইসরায়েলি আকাশ সীমায় একটি ইরানি ড্রোন ভূপাতিত করার পর সিরিয়ায় হামলা করে ইসরায়েল। সেখানে তাদেরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হয়। এরপর সিরিয়ার কিছু লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা করে ইসরায়েল। এসব কিছুই আশংকা তৈরি করছে যে, দেশটির রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ হয়তো যেকোনো সময় একটি পুরোদস্তুর আঞ্চলিক যুদ্ধেও মোড় নিতে পারে।
টিটিএন/আরআইপি