বিশ্ব গণমাধ্যমে জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক, জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্বসহ উঠে এসেছে। ভারতীয় ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দৈনিক, আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাসহ বেশ কিছু বিশ্ব গণমাধ্যম প্রখ্যাত এই বিজ্ঞান লেখকের ওপর ছুরি হামলার ঘটনার পরপরই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশের জনপ্রিয় কল্প-কাহিনী লেখক অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেটে শনিবার বিকেলের দিকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে এতে বলা হয়েছে, হামলাকারী বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে অধ্যাপক ইকবালের মাথায় পেছন থেকে আঘাত করেছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রনিক ও ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আয়োজিত এক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন তিনি; ওই সময় হামলার ঘটনা ঘটে।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা হামলাকারীকে হাতে-নাতে গ্রেফতার করেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে হামলার উদ্দেশ্য ও হামলাকারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি।
দ্য হিন্দু বলছে, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে অধ্যাপক ইকবাল অত্যন্ত স্পষ্টভাষী। সম্প্রতি তিনি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের চর্চার সমালোচনা করেন তিনি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে হামলার সম্পর্ক রয়েছে কি না তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত নয়।
এদিকে, ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি বলছে, শনিবার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের শহর সিলেটে দেশটির শীর্ষ একজন লেখকের ওপর হামলা হয়েছে। এতে তিনি আহত হয়েছেন। দেশটিতে ব্লগার ও লেখকদের ওপর ধারাবাহিক হামলার সর্বশেষ ঘটনা এই হামলা।
বিজ্ঞান কল্প-কাহিনী লেখক ও সেক্যুলার অ্যাকটিভিস্ট জাফর ইকবালকে হামলার পর সিলেটে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কনস্টেবল এএফপিকে বলেন, তার মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছে। এতে তার রক্তপাত হয়েছে।
এএফপি বলছে, বাংলাদেশের শীর্ষ সেক্যুলার লেখক জাফর ইকবালের নিরাপত্তায় সরকার পুলিশ নিয়োজিত রেখেছে। তবে হামলায় ঠিক কতজন অংশ নিয়েছিল সেব্যাপারে পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নেই। এছাড়া কোনো চরমপন্থী ইসলামি গোষ্ঠীর সঙ্গে হামলাকারীদের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটিও নিশ্চিত নয় পুলিশ।
ফরাসী এই বার্তাসংস্থা বলছে, গত চার বছরে বাংলাদেশে সেক্যুলার, নাস্তিক লেখক ও ব্লগারদের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালিয়েছে চরমপন্থী ইসলামি লেখকরা। হামলায় প্রায় এক ডজন লেখক ও ব্লগার নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন এক নাস্তিক ব্লগারও রয়েছে।
পুলিশ হামলায় জড়িত সন্দেহে দেশীয় জঙ্গিগোষ্ঠী আনসারুল্লাহ বাংলা টিমকে দায়ী করেছে। ভারতীয় উপমহাদেশে বেশির ভাগ হামলার সঙ্গে আল-কায়েদার অনুসারী এই গোষ্ঠীর সম্পর্ক রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছুরিবিদ্ধ হলেন অধ্যাপক জাফর ইকবাল। শনিবার বিকেল ৫ টার পর ওই ঘটনা ঘটে। ছুরিকাহত অধ্যাপককে সিলেটের ওসমানি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অধ্যাপক জাফর ইকবাল বরাবরই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তবে কী কারণে এই হামলা, তা এখনও জানা যায়নি। হামলার প্রতিবাদে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। ঢাকার শাহবাগেও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই, মধ্যপ্রাচ্যের গালফ টাইমস-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনা প্রকাশিত হয়েছে।
এসআইএস