ধর্ষণের পর খুন করাই তার নেশা
এম জয়শঙ্কর। ভারতের নাগরিক। সিরিয়াল ধর্ষক ও খুনি। ধর্ষণের পর খুন করাই যেন তার নেশা। দেশটির তামিলনাড়ু এবং কর্ণাটকে ৩০টিরও বেশি ধর্ষণ ও ১৫ ধর্ষিতাকে খুনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার গভীর রাতে তামিলনাড়ুর উপকণ্ঠে পারাপ্পান্না আগরাহারা কারাগারে আত্মহত্যা করেছে এ সিরিয়াল ধর্ষক ও খুনি।
ভারতীয় দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে বলছে, ২০১৭ সালে সিরিয়াল ধর্ষক জয়শঙ্করকে নিয়ে ‘সাইকো শঙ্কর’ নামে সিনেমা তৈরি হয় দেশটিতে। মঙ্গলবার কারাগারে সেভিং ব্লেইড দিয়ে গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে এ ধর্ষক।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, ওইদিন রাত সোয়া দুইটার সময় জেলখানার অন্য কয়েদিরা শঙ্করকে মেঝেতে রক্তের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক জয়শঙ্করকে পরীক্ষা করে দেখার পর দ্রুত সরকারি হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন।
পরে কারা কর্তৃপক্ষ, সিরিয়াল এ ধর্ষককে বেঙ্গালুরুর ভিক্টরিয়া হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে স্থানীয় সময় ভোর ৫টার দিকে চিকিৎসক জয়শঙ্করকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে কারাগারের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁক গলে প্রাচীর টপকে পালিয়েছিলেন জয়শঙ্কর। পরে ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বেঙ্গালুরুর কুদলিগেইট এলাকা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আবারো কারাগারে পাঠায়।
সিরিয়াল এ ধর্ষকের আত্মহত্যার ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারা কর্মকর্তারা পুলিশকে বলেছেন, জয়শঙ্কর কারা সেলুন থেকে একটি সেভিং ব্লেইড চুরি করার পর শার্টের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিল। তবে গলা কাটার সময় কোনো বন্দিই তাকে দেখেনি বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বেঙ্গালুরুর সালেম জেলায় বাড়ি জয়শঙ্করের (৪১)। ডিগ্রি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ট্রাক চালনাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন তিনি। ক্লিনার কাম ড্রাইভার জয়শঙ্কর দক্ষ ছিলেন তামিল, কান্নাদা ও হিন্দি ভাষায়।
২০০৯ সালের ২৩ আগস্ট কানগেয়াম অল-উইমেন পুলিশ স্টেশনে কর্মরত নারী পুলিশ কনস্টেবল এম জয়মনিকে (৩৯) ধর্ষণের পর হত্যা করে জয়শঙ্কর। পুলিশ কনস্টেবলকে ধর্ষণ ও হত্যার এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জ্যেষ্ঠ এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘জয়শঙ্কর পুলিশের ওই নারী কনস্টেবলকে অপহরণের পর ধর্ষণ ও হত্যা করে।
১৯ সেপ্টেম্বর সালেম জেলার সনকরির কাছে পুলিশ কনস্টেবল জয়মনির মরদেহ পাওয়া যায়। ওই বছরের ১৯ অক্টোবর পুলিশ জয়শঙ্করের খোঁজ শুরু করে। পরে ১৯ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্তে নেমে তিরুপুর পুলিশ জানতে পারে, জয়শঙ্করের ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগে ২০০৮ সালেও গ্রেফতার হয়েছিল। পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে ভয়ঙ্কর সব তথ্য। পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে সে জানায় আরো ১৩ জনকে ধর্ষণের পর হত্যার তথ্য। এর মধ্যে তিরুপুর, সালেম ও ধর্মপুরিতেই সাত নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে সে। ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালে এসব ঘটনা ঘটে।
একটি খুনের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় ২০১১ সালের ১৭ মার্চ তাকে ধর্মপুরি দ্রুত বিচার আদালতে হাজির করা হয়। পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে সশস্ত্র পুলিশি পাহাড়ায় তাকে কোয়েমবাটোরে নেয়া হয়। এ সময় সালেম বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছার পর পুলিশকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায় জয়শঙ্কর।
আসামি পালিয়ে যাওয়ায় পুলিশ সদস্য চিন্নাস্বামী লজ্জায় ও ক্ষোভে ১৯ মার্চ নিজেকে গুলি করেন।
পুলিশের হাত ফঁসকে পালিয়ে যাওয়ার পরও থেমে থাকেনি সিরিয়াল এ ধর্ষকের অপকর্ম। পুলিশের চোখে পলাতক জয়শঙ্কর গ্রেফতার হওয়ার আগে আবারো ছয় নারীকে ধর্ষণ ও হত্যা করে। তবে এবারে তার খুনের তালিকায় যোগ হয় ধর্মপুরির এক পুরুষ ও অপর এক শিশু।
অবশেষে ২০১১ সালের ৪ মে জয়শঙ্করকে বিজাপুর থেকে গ্রেফতার করে কর্ণাটক পুলিশ। তদন্তে পুলিশ কর্মকর্তারা জানতে পারেন, চলতি পথের সিঙ্গেল নারীরাই তার টার্গেটে পরিণত হতেন। এ নারীদের অপহরণের পর ধর্ষণ ও হত্যা করতো সে।
এসআইএস/এমএস