বিশ্ব হিজাব দিবস : কেবল এক টুকরা কাপড় নয়
মাথায় হিজাব পেঁচিয়ে নিউ ইয়র্কে বেড়ে ওঠা নাজমা খান বলছেন তিনি খুব অল্প বয়স থেকেই ধর্মীয় বৈষম্যমূলক বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচিত।
১১ বছর বয়সে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাজমা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। এরপর মিডল ও হাই স্কুলের পুরোটা তাকে একরকম পীড়নের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে।
টুইন টাওয়ারে হামলার পর অবস্থার আরও অবনতি হয়। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, প্রতিদিন রাস্তায় হাঁটার সময় আমাকে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতো। আমার পিছু নেয়া হয়েছে, গায়ে থুতু দেয়া হয়েছে, লোকজন আমাকে ঘিরে ধরতো, সন্ত্রাসী বলতো, ওসামা বিন লাদেন বলতো।
হিজাবের কারণে যেসব নারীদের একই ধরনের সমস্যায় মুখে পড়তে হচ্ছিল তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নাজমা বেছে নিলেন সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমকে। সবাইকে আহ্বান জানালেন, যাদেরই এমন বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার হতে হচ্ছে তারা জন্য তাদের অভিজ্ঞকথার কথা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তুলে ধরেন।
৩৫ বছর বয়সী এই নারী বলছেন, আমি যখন তাদের কথাগুলো পড়তাম আমি তাদের মাঝেই আমার নিজের সংগ্রামের দৃশ্য দেখতাম।
তখনই বিশ্ব হিজাব দিবস পালনের চিন্তা মাথায় আসে নাজমার। প্রতি বছরের ১ ফেব্রুয়ারি নাজমার অলাভজনক প্রতিষ্ঠানটি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সারাবিশ্বের নারীদের একদিনের জন্য হিজাব পরার আহ্বান জানায়। এমন আহ্বান জানানো হয়, সারা বিশ্বের মুসলিম নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য।
মুসলিম নারীরা মনে করেন, হিজাব তাদের ধর্মীয় বিধিবিধানের অংশ।
ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে অর্গানাইজেশনের এই প্রতিষ্ঠাতা বলছেন, তারা একদিন আমার মতো করে চললে বুঝতে পারবে- আমার ও তাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। বরং ওই একদিনের কারণেই তারা হয়তো হিজাবকে অন্য আলোকে দেখতে সক্ষম হবে।
২০১৩ সালে দিবসটি পালন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৯০টি দেশের নারীরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
এলি লয়েড নামে এক বিট্রিশ খ্রিষ্টান নারী ও তার ১১ বছর বয়সী মেয়েও এখন হিজাব ব্যবহার করছেন।
এলি বলছেন, আমি মনে করি মাথা ঢাকার জন্য তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা ঠিক না।
আল জাজিরাকে তিনি আরও বলেছেন, আমি যদি মাথায় হ্যাট পড়ি, আমাকে কেউ কিছু বলতে আসছে না, টেনে চুল বাঁধলাম বা খোলা রাখলাম বা বেনী করলাম- কেউ কিছু বলতে আসছে না, তাহলে কেন হিজাব পরার জন্য কোনো মেয়েকে কিছু বলা ঠিক হবে?
কাউন্সিল অন অ্যামেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সের নিউ ইয়র্ক চ্যাপ্টারের নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাশের বলেছেন, বার্ষিক এই পদক্ষেপটি ধর্মীয় বিধান মেনে মাথা ঢেকে রাখা নিয়ে যে মিথ্যা ধারণা ছিল তা কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হচ্ছে।
আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, হিজাব পড়া কোনো মুসলিম নারীকে বিদেশি, নতমস্তক ও পিছিয়ে পড়া বলে মনে করা হয়।
ইসলামোফোবিয়া
চেক নাগরিক মিরোস্লোভা কাজের সুবাদে থাকেন যুক্তরাজ্যে। চার বছর আগেহ হিজাব পরা শুরুর পর তেকে তাকেও যেতে হয়েছে অদ্ভূত নানা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে। পথে তাকে ‘বিচ’ বলে গালি দেয়া হয়েছে, বলা হয়েছে আইসিস, মুখে থুতু দেয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর হুমকিও দেয়া হয়েছে তাকে।
৩৫ বছর বয়সী এই নারী আল জাজিরাকে বলেছেন, মাঝে মাঝে আমাকে হাস্যকর প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়। আমাকে হয়তো কেউ জিজ্ঞাসা করেন- এটা পরে তোমার গরম লাগে না?
‘একবার বাসায় ফিরে দেখি কেউ আমার জানলায় স্প্রে করে লিখে দিয়ে গেছে- এটা তোমার দেশ না।’
অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলোর হিসেবে সারা বিশ্বেই ইসলামোফোবিয়া ও ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের মাত্রা বেড়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বাসিন্দা ওজালা আহমেদ বলছেন, হিজাবের কারণে একজন মুসলিম নারী আরও দৃশ্যমান মুসলিম হয়ে ওঠেন আর এতেই ইসলামোফোবিদের সহজ টার্গেটে পরিণত হন তারা।
কর্পোরেটপ সেক্টরে মুসলিম বৈষম্য প্রতিরোধেও কাজ করছে দ্য ওয়ার্ল্ড হিজাব ডে অর্গানাইজেশন।
নাজমা বলেন, হিজাব শুধু এক টুকরা কাপড় নয়, যেটি দিয়ে মাথা ঢাকা যায়, এটা তার চেয়ে অনেক বড় একটা বিষয়। আমার ব্যক্তিসত্তাকে চিত্রিত করে হিজাব।
এ বছরের হিজাব দিবসের স্লোগান ছিল ‘হিজাবে শক্তি’ বা ‘স্ট্রং ইন হিজাব।’
সূত্র: আল জাজিরা।
এনএফ/এমএস