ভিডিও EN
  1. Home/
  2. আন্তর্জাতিক

উত্তপ্ত রাখাইনে বিক্ষোভ সংঘর্ষ, গুলিতে নিহত বেড়ে ৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ১৭ জানুয়ারি ২০১৮

মিয়ানমারের উত্তরাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের প্রাচীন এমরাউক-ইউ শহরে ব্যাপক বিক্ষোভ থেকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে বিক্ষোভকারীরা। আরাকান রাজ্যের পতন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিক্ষোভে মঙ্গলবার রাতে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৯ বৌদ্ধ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো অন্তত ১২ জন।

রাখাইন রাজ্য পার্লামেন্টের সদস্য ইউ তুন থান সেইন এমরাউক-ইউ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রাত পৌনে তিনটার দিকে টেলিফোনে দেশটির দৈনিক দ্য ইরাবতির সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, এমরাউক-ইউ জেনারেল হাসপাতাল থেকে ১৪১ কিলোমিটার দূরে রাজ্যের রাজধানী সিত্তের হাসপাতালে আহত ১২ জনকে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি, নিহতদের অন্তত দু’বার গুলি করা হয়েছে, এর অধিকাংশই তলপেট এবং পায়ে।’

ইউ তুস থান সেইন বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আরাকান রাজ্যের ২৩৩তম পতন দিবস উপলক্ষে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ শুরু করেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ পতন দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি না দেয়ায় তারা বিক্ষোভ করেন।

প্রত্যেক বছরের ১৫ এবং ১৬ ডিসেম্বর স্থানীয়রা ঐতিহ্যবাহী কুস্তি খেলা এবং প্রভাবশালী রাজনীতিক ও মানবাধিকার কর্মীদের মুখে সাহিত্যের বয়ান শুনে আরাকানের পতন দিবস উদযাপন করেন।

সন্ধ্যার দিকে এমরাউক-ইউ শহরের রাস্তায় অল্পসংখ্যক বিক্ষোভকারীকে দেখা গেলেও ঘণ্টা খানেকের মধ্যে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দিকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে যাত্রা শুরু করেন বিক্ষোভকারীরা।

আগামী কয়েক মাস পর এগারতম গ্রেডের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অপেক্ষায় থাকা হাজার হাজার শিক্ষার্থীও ওই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন বলে স্থানীয় হাই স্কুলের এক শিক্ষক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এক ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে এমরাউক-ইউ শহরের রাস্তাঘাটের দখল নেয় বিক্ষোভকারীরা।

সংসদ সদস্য ইউ তুন থান সেইন বলেন, রাত ১০টার দিকে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। দ্রুত সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের অনেকে প্রশাসন ভবন লক্ষ্য করে পাথর ও ইট ছুড়তে শুরু করে। পুলিশ ভবনের ভেতরে ঢুকে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ট্রাক ভাঙচুর চালায়, পরে হামলাকারীদের ঠেকাতে পুলিশ গুলি নিক্ষেপ করে।

এদিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। তবে সংসদ সদস্য ইউ তুন থার সেইন বলেছেন, হাসপাতালে তিনি একজন পুলিশ সদস্যকেও চিকিৎসা নিতে দেখেননি। হাসপাতালে বেসামরিক আহত এবং নিহতদের তিনি দেখেছেন বলে জানিয়েছেন।

তুন থার সেইন বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের ঠেকাতে পুলিশ যদি রাবার বুলেট ব্যবহার করতো হাতলে গণহত্যার ঘটনা ঘটতো না। বিক্ষোভকারীরা শুধু ইট এবং পাথর নিক্ষেপ করেছেন; তাদের হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র ছিল না।’

স্কুলের ওই শিক্ষক বলেন, তিনি বিক্ষোভে অংশ নেননি, তবে তার শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থেকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করেছিলেন। প্রশাসন ভবনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক গুলিবর্ষণের শব্দ শুনেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ গুলি ব্যবহার করেছে, রাবার বুলেট নয়। আমি এক তরুণের তলপেটে ছিদ্র দেখেছি।’ এমরাউক-ইউ শহরের পুলিশ প্রধান মেজর কিয়াও মিয়া উইন ও প্রশাসনের কর্মকর্তা বো বো মিয়ান্ত থেইন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তবে স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছে। তবে তিনি আর কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর দুটি ট্রাকে করে সশস্ত্র সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে দেশটির পুলিশের ৩০টি ও সেনাবাহিনীর একটি তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার জেরে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পরে। সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়েছে; এর মাঝেই রাখাইনে বৌদ্ধদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলো।

সূত্র : দ্য ইরাবতি।

এসআইএস/জেআইএম

আরও পড়ুন