পেট ব্যথা নয়, যন্ত্রণার কারণ যৌন নির্যাতন
যন্ত্রণায় ছটফট করছে চার বছরের মেয়ে। তাকে কোলে নিয়ে বাবা-মা ছুটে যান বেসরকারি একটি হাসপাতালে। ভেবেছিলেন, ক্রিমির কারণে বোধহয়তাদের মেয়ের পেট ব্যথা করছে। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা জানান, তাদের মেয়ে যৌন নির্যাতনের ষিকার হয়েছে।
কথাটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না ওই দম্বপতি। ক্ষণিকের জন্য তারা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরক্ষণেই তারা ঠিক করেন, ওই ঘৃণ্য অপরাধীদের ছেড়ে দিলে চলবে না।
দেরি না করে যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা মেয়েকে কোলে নিয়েই ভারতের নেতাজিনগর থানায় চলে যান তারা। সেই থানার পুলিশই তাদের নিয়ে যায় যাদবপুর থানায়।
বাবা-মায়ের কোলে ছটফট করতে শিশুটি বারবার বলেছে, তার খুব ব্যথা করছে। বিধ্বস্ত বাবা-মা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের পর বৃহস্পতিবার রাত ১ টা ২০ মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করেন মেয়েকে।
শুক্রবার সকালেও এসএসকেএমের স্ত্রীরোগ বিভাগের বিছানায় শুয়ে মেয়েটি শুধু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল। তাকে আগলে ঠায় বিছানার পাশেই বসেছিলেন মা। তিনি ভাবতেও পারছিলেন না, শীত পড়ার কারণে যে মেয়েকে দু’টি প্যান্ট, সোয়েটার পরিয়ে স্কুলে পাঠিয়েছিলেন, তার সঙ্গে এমন নারকীয় ঘটনা ঘটালো।
লক্ষাধিক টাকা খরচ করে কয়েক মাস আগে মেয়েকে বড় স্কুলে ভর্তি করেছিলেন তারা। ভাল পড়াশোনার পাশাপাশি নিরাপত্তা ঘাটতি থাকবে না ভেবেছিলেন তারা। কিন্তু সেই ভাবনাতেই ছেদ পড়ল।
রাতে ভর্তি করানোর পর থেকে ওয়ার্ডে কর্তব্যরতদের কাছে শিশুটির বাবা বারবার জানতে চেয়েছেন ‘কখন পরীক্ষা করা হবে?’ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সাংবাদিকদের সামনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কার ভাষায়, ‘২৪ ঘণ্টা হয়ে গেলে কী আর কোনো প্রমাণ থাকবে বলুন? বারবার বলছে, মেডিক্যাল টিম আসবে। কিন্তু কেউ আসছে না। এ দিকে, মেয়েটাও যন্ত্রণায় ছটফট করছে।’
মানসিক যন্ত্রণা আর অভিযুক্তদের প্রতি তীব্র রাগ, ক্ষোভে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিলেন না শিশুটির বাবা। হাসপাতালে দাঁড়িয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘ওই স্কুলে কোনো বাচ্চাকে পাঠানো উচিত নয়। এত টাকা দিয়ে মরতে পাঠাব নাকি? স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়া উচিত। বেঁচে থাকলে তবে তো পড়াশোনা করবে ওরা।’
দুপুর ১২টার পর স্ত্রীরোগ বিভাগের দোতলার একটি ঘরে শিশুটির বাবাকে ডাকা হয়। শিশুর দাদা অপেক্ষা করছিলেন বাইরে। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি জানান, ‘নাতনির কষ্ট আর দেখা যাচ্ছে না। কখন যে আসবে ডাক্তার!’
দুপুর ১টা নাগাদ শিশুর বাবা জানান, সব রকম পরীক্ষা করা হয়েছে। স্ত্রী-রোগ, শিশু চিকিৎসক-সহ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ এসে শিশুটিকে পরীক্ষা করেছেন। আর পুরো প্রক্রিয়ার সময় মেয়ের পাশেই থেকেছেন তারা।
পুলিশের কাছে দু’জন শিক্ষককে চিহ্নিত করে শিশুটি জানিয়েছে, ওই দু’জন মিলে শুক্রবার দুপুর ২টার পরে চকলেট দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়েছিল।
সে কথা শুনে স্কুলের পথে পা বাড়ান শিশুটির বাবা। যাওয়ার সময়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘আমরা যাচ্ছি, আপনারাও চলুন।’ যাওয়ার আগে তিনি আরও বলেন, ‘জানেন আমার মেয়েটার হার্টে একটা ফুটো আছে!’ আনন্দবাজার।
কেএ/এমএস