আমি পড়তেই চাই, কিন্তু বেচে দেবে মা
নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষা দিতে স্কুলে এসেছিল মেয়েটি। পরীক্ষাও দিয়েছিল। এতটুকু অস্বাভাবিকতা নজরে আসেনি কারও। তারপরেই বিপত্তি ঘটে। ছুটির পর বেরিয়ে নিজের মাকে দেখতে পেয়েই সে আতঙ্কে আবার স্কুলে ঢুকে পড়ে। মাও নাছোড়বান্দা। তাকে নিয়েই বাড়ি ফিরবে। এ টানাপড়েনের সময়ই শিক্ষিকাদের কাছে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী।
শিক্ষকদের ওই ছাত্রী বলেন, ‘বাড়ি ফিরলেই বিক্রি করে দেবে মা। আমাকে বাঁচান। আমি পড়াশোনা করতে চাই। ছাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে হতবাক হয়ে যান স্কুলের শিক্ষিকরা। শেষ পর্যন্ত তাদের তৎপরতাতেই পুলিশ এসে গ্রেফতার করে মাকে।
ওই ছাত্রী বলে, মা ফোনে কাউকে জানাচ্ছিল আমাকে বিক্রি করে দেবে। খারাপ কাজ করানোর জন্য মা আমাকে চাপ দিত। আমি আর মায়ের সঙ্গে থাকতে চাই না। আমি পড়াশোনা করতে চাই।
তবে ওই শিক্ষার্থীর মায়ের দাবি, মেয়ে রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। তাই তাকে নেওয়ার জন্য স্কুলে গিয়েছিলেন তিনি।
বুধবার দুপুরের এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ছুটির পর আচমকাই কাঁদতে শুরু করে মেয়েটি। তার অভিযোগ শুনে আর দেরি না করে পুলিশকে জানানো হয়। মেয়েটির সাহসী পদক্ষেপে আমরা পাশে আছি।
পুলিশ জানিয়েছে, মেয়েকে বিক্রির করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ওই নারী। এটা জানতে পেরে মঙ্গলবার বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ওই ছাত্রী। সেখান থেকেই স্কুলে পরীক্ষা দিতে আসে। কিন্তু ছুটির পর বেরিয়ে মাকে দেখেই ভয় পেয়ে যায় সে। মেয়েটির অভিযোগের কথা জানাজানি হতেই স্থানীয় বাসিন্দারা ওই নারীকে আটকে রাখে। পরে পুলিশ গিয়ে ছাত্রীকে উদ্ধার করে শিশু সুরক্ষা কমিটির হাতে তুলে দেয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই নারীর কথায় অসঙ্গতি রয়েছে। অসামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে তার যোগ আছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল ফোনের কল লিস্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার মালদহ জেলা আদালতে পেশ করা হয় তাকে। শিশু সুরক্ষা কমিটির চেয়ারম্যান চৈতালী ঘোষ সরকার বলেন, আমাদের হোমে থেকেই মেয়েটি পরীক্ষা দেবে। আমরা তার কাউন্সেলিং করব।
টিটিএন/কেএ/এমএস