‘নিজ বাড়িতে নয়, রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হবে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে’
প্রত্যাবাসন চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে ফেরত গিয়ে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ঠাঁই হবে দেশটির অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র অথবা শরণার্থী শিবিরে। দেশে ফেরার পর রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ জানানোর একদিন পর শনিবার ঢাকা এ তথ্য জানিয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, গত আগস্টের শেষের দিকে রাখাইনে শুরু হওয়া সহিংসতায় এখন পর্যন্ত ৬ লাখ ২০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান থেকে পালিয়ে আসা এ রোহিঙ্গারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় জনাকীর্ণ শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন। ওয়াশিংটন এবং জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওই অভিযানকে জাতিগত নিধন হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরাতে গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। শনিবার ঢাকা বলছে, এ চুক্তি রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার আগাম সুযোগ তৈরি করবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বলেছেন, ‘প্রাথমিকভাবে সীমিত সময়ের জন্য তাদেরকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে রাখা হবে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তির ব্যাপারে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর শুক্রবার উদ্বেগ প্রকাশের মাহমুদ আলী এসব কথা বলেন। শুক্রবার ইউএনএইচসিআর জানায়, শরণার্থীদের ফেরত পাঠানোর মতো নিরাপদ অবস্থানে নেই রাখাইন।
চুক্তি অনুযায়ী, মিয়ানমার ছেড়ে আসা শরণার্থীদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় রাখাইনে তাদের নিজ বাড়িতে অথবা আশপাশের ‘নিরাপদ এবং সুরক্ষিত’ স্থানে ফেরাতে উৎসাহ দেবে ইয়াঙ্গুন।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘সহিংসতার সময় রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ গ্রাম পুড়ে গেছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত শরণার্থীদের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র থাকতে হবে।’
‘সেখানে কোনো বাড়িঘর নেই। কোথায় তারা বসবাস করবে? এটা (তাদের নিজ বাড়িতে ফেরা) সম্ভব নয়।’
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, মিয়ানমার তাদের স্বল্প সময়ের জন্য অস্থায়ী আশ্রয় নিশ্চিত করবে। বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা মেনে শরণার্থীরা রাখাইন প্রদেশে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার অনুমতি পাবে। ২০১২ সালে রাখাইনে সহিংসতায় বাস্ত্যুচুত এক লাখের বেশি রোহিঙ্গা সেখানে শরণার্থী শিবিরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বসবাস করে আসছে।
রোহিঙ্গা মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ জুবায়ের বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেন, রোহিঙ্গারা কখনোই স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে রাজি হবে না; যদি তাদের গ্রামে ফেরা এবং জমির মালিকানা ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা না করা হয়।
মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের স্বাক্ষরিত ১৯৯২ সালের একই ধরনের একটি চুক্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই চুক্তির পর প্রায় ২ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরলেও এখনো নাগরিকত্বসহ অন্যান্য সঙ্কটের সমাধান হয়নি।
সূত্র : এএফপি।
এসআইএস/জেআইএম