ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষের মুখে ইয়েমেন
যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে ইয়েমেনের বহু মানুষ তীব্র মানবিক সংকটে দিন কাটাচ্ছে। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতর্ক বলেছেন এই মুহূর্তে যদি ত্রাণ সরবরাহ চালু না থাকে তবে দেশটির কয়েক লাখ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটের মধ্যে পড়বে যা ভয়াবহতম দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি তৈরি করবে। খবর বিবিসি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি মার্ক লোকক ইয়েমেনের ওপর সৌদি জোটের অবেরাধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সোমবার ইয়েমেনের সঙ্গে আকাশ, সাগর এবং স্থলসীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করে সৌদিজোট।
ইয়েমেনের হুতিপন্থী একটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শনিবার সন্ধ্যায় কিং খালেদ বিমানবন্দরের ওপর বিদ্রোহীরা একটি বুরকান এইচ-টু শ্রেণির দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। ইয়েমেনের সীমান্ত থেকে এ বিমানবন্দরের দূরত্ব সাড়ে আটশ কিলোমিটার।
সৌদি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সৌদি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আকাশেই ধ্বংস করা হয়। কিন্তু এর কিছু অংশ বিমানবন্দরে গিয়ে পড়ে।
সৌদির তরফ থেকে বলা হচ্ছে, এই অবরোধের ফলে ইরান হুতি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ করতে পারবে না। তবে ইরানের তরফ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকেই আরব জোটের সঙ্গে লড়াই করছে হুতিরা।
বুধবার একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এক সংবাদ সম্মেলনে লোকুক বলেন, আমি কাউন্সিলকে বলেছি, এই অবরোধ তুলে নেয়া না হলে ইয়েমেনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। গত কয়েক দশকেও বিশ্ব দেখেনি এমন দুর্ভিক্ষে পতিত হবে কয়েক লাখ মানুষ।
এ সপ্তাহের শুরুতে জাতিসংঘ এবং রেডক্রস সতর্ক বলেছে, মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ ইয়েমেনি নাগরিক ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়বে।
রেডক্রস বলছে, ইয়েমেনের সীমান্ত বন্ধের ঘোষণায় তাদের ক্লোরিন ট্যাবলেটের চালান বন্ধ করতে হয়েছে। যেসব এলাকায় কলেরা ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে এই ট্যাবলেটগুলো পানি শোধনের জন্যে পাঠানো হচ্ছিল। সেখানকার প্রায় ৯ লাখ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। সীমান্তে আটকে আছে ইনসুলিনসহ আরও কিছু জীবন রক্ষাকারী ওষুধ।
জাতিসংঘ বলছে, অবরোধের কারণে ৭ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষে পতিত হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির লোকজন তাদের প্রয়োজনীয় সব কিছুর জন্যই বাইরের দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু অবরোধের কারণে খাদ্য, জ্বালানি বা ওষুধও দেশের ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না।
জাতিসংঘের এক হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫ সালের মার্চে ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিমান হামলা এবং বিভিন্ন সংঘাতে এ পর্যন্ত দেশটিতে ৮ হাজার ৬৭০ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে ৬০ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছে আরো ৪৯ হাজার ৯৬০ জন।
টিটিএন/পিআর