কাতারের শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতেই অবরোধ!
কাতারের আমির শেইখ তামিম বিন হামাদ আল থানি বলেছেন, দোহার শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতেই তাদের ওপর অবরোধ আরোপ করেছে আরব বিশ্বের চার দেশ। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে দেশটির ওপর অবরোধ আরোপ করেছে সৌদি আরব, মিসর, আরব আমিরাত ও বাহরাইন।
মার্কিন টেলিভিশন সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটস নামের একটি অনুষ্ঠানে আল থানি বলেন, এটা সুস্পষ্ট যে, কাতারের নেতৃত্বের পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে আরব দেশগুলো।
রোববার প্রচারিত ওই অনুষ্ঠানে উপস্থাপক চার্লি রোজকে কাতারের আমির বলেন, এটাই প্রথম নয়। এর আগেও তারা এমন করেছে। ইতিহাস থেকেই জানা যায় যে, ১৯৯৬ সালে যখন আমার বাবা আমির হলেন তখনও তারা এমন চেষ্টা চালিয়েছে।
গত জুনের ৫ তারিখে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিসর এবং বাহরাইন। সন্ত্রাসে মদদ এবং অর্থ সহায়তা প্রদানের অভিযোগ এনে দোহার সঙ্গে স্থল, সাগর এবং আকাশসীমা বন্ধ করে দেয় দেশগুলো।
আল থানি বলেন, তারা আমাদের স্বাধীনতা, আমরা যেভাবে চিন্তা করি এবং দেশের বিষয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ চিন্তাধারা গুলো তাদের পছন্দ নয়।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেশের জনগণকে বাক স্বাধীনতা দিতে চাই কিন্তু তারা এ বিষয়ে খুশি নয়। তারা এটাকে হুমকি হিসেবে দেখছে। আল থানি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার ব্যবহার করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়তে শুরু করে।
সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আরব ইসলামিক আমেরিকান সম্মেলন শেষ হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ পর থেকেই দোহার সঙ্গে কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব শুরু হয় আরব জোটের। ওই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ আরব এবং মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোর ৫৫ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
কাতারের ওপর অবরোধ আনার বিষয়টি উল্লেখ করে আল থানি বলেন, এটা ছিল একটা বড় ধাক্কা। তিনি সিবিএস নিউজকে বলেন, অবরোধ আরোপের কয়েক সপ্তাহ আগেও আমরা একসঙ্গে ছিলাম। একটি রুমের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আমরা সবাই বৈঠক করেছি।
তিনি বলেন, সেখানে আমরা সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসীদের মদদ ও অর্থ সহায়তার বিষয়েও কথা বলেছি। আমাদের সম্পর্কে কোনো দেশই তখন কোনো উদ্বেগ প্রকাশ করেনি। কেউ কিছু বলেনি।
কাতারে তালেবান সংগঠনের উপস্থিতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রাজধানী দোহায় তাদের কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে।
তিনি বলেন, আমরা তাদের আসতে বলেছি বলেই তারা এখানে এসেছে বিষয়টি এমন নয়। তিনি আরো বলেন, আমেরিকার তরফ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল যে, তারা তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করতে চায়। যদি আমরা তাদের এখানে রাখি তবে আলোচনা সম্ভব। তাই আমরা তাদের এখানে থাকার অনুমতি দিয়েছি। এ কারণেই তারা এখানে আছে। কিন্তু যদি সন্ত্রাসবাদে সহায়তার প্রসঙ্গ আসে তবে অবশ্যই সেটা না কারণ আমরা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করি না।
ওই সাক্ষাতকারে আমির আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে কূটনৈতিক সমস্যা সমাধানে সরাসরি কথা বলতে চায় তারা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তরফ থেকে এ বিষয়ে এখনও তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আমরা এটার সমাপ্তি চাই। কিন্তু কোনো কিছুই আমাদের সম্মান এবং আমাদের সার্বভৌমত্বের পক্ষে যাচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, আমি সব সময়ই বলেছি আমরা এর শেষ চাই।
কূটনৈতিক সংকট শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো বিদেশ সফর থেকে দেশে ফেরার পর অক্টোবরের শুরুর দিকে দোহায় আমিরের কাছ থেকে ওই সাক্ষাতকার নেয়া হয়।
টিটিএন/পিআর