হিন্দু হত্যার অভিযোগ অস্বীকার আরসার
রাখাইনে হিন্দুদের হত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। উত্তর রাখাইনের একাধিক গণকবর থেকে দু’দিনে ৪৫ হিন্দুর মরদেহ উদ্ধারের পর মিয়ানমার সেনাবাহিনী এই হত্যায় আরসার বিদ্রোহী জড়িত বলে অভিযোগ করে।
গত মাসে রাখাইনে সেনাবাহিনী ও রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংঘর্ষের পর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর প্রায় চার লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে।
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার ‘জাতিগত নিধন’ অভিযান চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘের অভিযোগের পর দেশটির সরকারের সঙ্গে বাগযুদ্ধ চলছে। জাতিসংঘের অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে দশকের পর দশক ধরে রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গারা নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে।
রাখাইনের যে এলাকার গণকবর থেকে নারী শিশুসহ ৪৫ হিন্দুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে বুধবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেখানে অল্প কয়েকজন সাংবাদিককে নিয়ে যায়।
২৫ আগস্ট রাখাইনে এই গণহত্যার জন্য রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের দায়ী করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। একই দিনে রাখাইনে পুলিশি তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গারা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এই হামলার পর থেকে রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী কঠোর অভিযান শুরু করে সেনাবাহিনী।
হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগের ব্যাপারে এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়েছে আরসা। এতে বলা হয়েছে, আরসা এবং এর কোনো সদস্যই হত্যা, যৌন সহিংসতা অথবা জোর করে সংগঠনে নিয়োগের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেয়া এক টুইট বার্তায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের দোষারোপ না করতে সেনাবাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আরসা।
আমরা প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছি
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা এক হিন্দু বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ওইদিন মুখোশ পরিহিত দুর্বৃত্তরা তাদের গ্রামে হামলা চালায়। এসময় হিন্দুদেরকে কুপিয়ে হত্যার পর গর্তে চাপা দেয়। নি মল; স্থানীয় হিন্দু নেতা। রাখাইনে গণকবর খুঁজে বের করতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করেছেন তিনি।
নি মল বলেন, তাদের গ্রামের সুন্দরী আট নারীকে হত্যা করেনি। তাদেরকে বিয়ে করবে বলে বাঁচিয়ে রাখে মুখোশ পরিহিত অস্ত্রধারীরা।
এই আট নারীর চারজন বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন। এএফপিকে এই চার হিন্দু নারী বলেন, তারা খ্যা মং সেইক এলাকায় ওই গণহত্যা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। সঙ্গে আট সন্তানকেও নিয়ে এসেছেন তারা।
কক্সবাজারে হিন্দুদের ছোট একটি গ্রামে আশ্রয় নেয়া ২২ বছর বয়সী বিনা শীল বলেন, ‘আমরা প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিলাম। নারীদেরকে ক্ষমা করতে বলেছিলাম।’
‘তারা বলেছিল, তাদেররকে বিয়ে হলেই ক্ষমা পাবে। আমরা জীবন বাঁচাতে বিয়ের শর্তে রাজি হয়েছিলাম।’ পরে হামলাকারীরা এই চার নারীকে বাংলাদেশের ভেতরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিয়ে যায়। বিনা শীল বলেন, স্থানীয় এক হিন্দু নেতা তাকে উদ্ধার করে হিন্দুদের গ্রামে নেয়ার আগে ওই হামলাকারীরা তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানান।
এদিকে সহিংসতার আগুনে পুড়ে যাওয়া রাখাইনের গ্রামগুলো অধিগ্রহণের পর পুনঃউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে বলে দেশটির একজন মন্ত্রীর বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস বুধবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।
দেশটির সামাজিক উন্নয়ন, ত্রাণ ও পুনর্বাসনবিষয়ক মন্ত্রী উইন মিয়্যাত আয়ে বলেছেন, আইন অনুযায়ী, পুড়ে যাওয়া ভূমি সরকারি জমিতে পরিণত হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের বরাত দিয়ে তিনি বলেছেন, রাখাইনের পুনঃউন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড খুবই কার্যকর হবে। রোহিঙ্গারা তাদের পুরনো গ্রামে ফিরতে চাইলে কী হবে সে বিষয়েও জানায়নি মিয়ানমার।
এসআইএস/আইআই