বিদ্রোহ থেকে বিপ্লব সৌদির নারী গাড়ি চালকদের
অবশেষে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দিচ্ছে সৌদি আরব। দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ এ সংক্রান্ত একটি ডিক্রি জারি করেছেন। সেখানকার শীর্ষ ধর্মীয় নেতাদের কাউন্সিলও এই পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছে।
তবে গাড়ি চালাতে নারীদের অনুমতি দেয়ার পথ মোটেও সুখকর ছিল না। সৌদি আরবের চরম রক্ষণশীল সমাজে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার দাবিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করেছে। গাড়ি চালানোর অভিযোগে অনেক নারীকে কারাগারেও যেতে হয়েছে।
১৯৯০ সালের ঘটনা; মাদিহা আল আজরোসসহ ৪৬ জন নারী বিদ্রোহ করে বসেন। তারা সকলেই নিজেদের গাড়ী চালককে বিদায় করে দিয়ে রিয়াদের রাস্তায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
এতো বছর পরে এসে সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মাদিহা জানান, আমরা সেসময় গাড়ি চালিয়েছি মাত্র। তবে সেটা ছিল উল্লাস করার মতো, সেটা ছিল সত্যিই অসাধারণ।
তবে ওই ঘটনার পর নারীদের চাকুরিচ্যুত করা হয় এবং স্থানীয় পত্রিকায় তাদের নিন্দা জানানো হয়। দেশের বাইরে ভ্রমণেও তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
তবে এখন পট পরিবর্তন হয়েছে। আজ মাদিহা টুইট করে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। কারণ বিভিন্ন স্থানে বাধার সম্মুখীন হওয়ার পর বিশ্ববাসীর নিন্দার ঝড় ওঠার ফলে আজ তারা অনেকটাই সফল।
সৌদি প্রেস এজেন্সির খবরে জানানো হয়েছে রাজকীয় এই ডিক্রি মোতাবেক নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করা হবে। তবে ২০১৮ সালের জুন মাস থেকে তা কার্যকর হবে।
যদিও বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি তবে এই রাজকীয় আদেশে বলা হয়, প্রয়োজনীয় শরীয়াহ মানদণ্ড অনুসরণ করেই এই নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছে।
সৌদি সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে অনেক নারী টুইট করে স্বাগত জানিয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও স্বাগত জানিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র হিদার নাওর্ট বলেন, আমি মনে করি সে দেশের জন্য এটি সঠিক দিক-নিদের্শনার মহান পদক্ষেপ। তারা যে এ ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সেজন্য আমরা উচ্ছ্বসিত। আমি মনে করি এটি খুবই ইতিবাচক লক্ষণ।
২০১১ সালে গাড়ি চালানোর ‘অপরাধে’ গ্রেফতার হন মানাল আল শরিফ। নয়দিন কারাভোগ করেছেন তিনি। তিনি জানান, ‘গ্রেফতার হওয়ার পর আমি নানা ধরনের হুমকিও পেয়েছি। ইমাম সাহেব চেয়েছিলেন আমাকে জনসম্মুখে বেত্রাঘাত করবেন। এছাড়া নজরদারি হয়রানি তো ছিলই।’
তিনি বুধবার টুইট করে জানান, সৌদি আরব আর কখনো আগের নীতিতে ফিরে যাবে না বলেই বিশ্বাস করি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রধান কেনিথ রথ টউট করে জানান, শেষ পর্যন্ত নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দিচ্ছে সৌদি আরব। এখন তাদের অভিভাবক হিসেবে বিবেচনা করে আইন তৈরি করতে হবে, তাদেরকে শিশু হিসেবে ট্রিট করা বন্ধ করতে হবে।
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট
কেএ/আরআইপি