জঙ্গি হামলা নয়, বাঁচার লড়াই সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের
মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ জঙ্গি হামলা নয় বরং জাতিগত মুক্তির চেষ্টা বলে দাবি করেছেন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ)। তাদের প্রধান লক্ষ হল, মিয়ানমারের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা।
গত ২৫ আগস্ট পুলিশরে তল্লাশি চৌকিতে হামলা ছিল মূলত আত্মরক্ষামূলক। রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলবে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।
বছর চারেক আগে অর্থাৎ ২০১২ সালের মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নারকীয় হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া থেকেই এআরএসএ’র জন্ম বলে বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান সংগঠনের প্রধান নেতার মুখপাত্র ‘আবদুল্লাহ’।
আবদুল্লাহ বলেন, ধর্মভিত্তিক কোনো জঙ্গি সংগঠন নয় এআরএসএ। আমাদের উদ্দেশ্য জঙ্গি হামলা নয়, বাঁচার লড়াই; জাতিগত অধিকার আদায়ের জন্য মুক্তিকামী সংগঠন এটা।
আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও খারিজ করে দেন তিনি। মুসলমান বলেই যে এআরএসএ’র সঙ্গে জঙ্গি সংগঠনের সংযোগ থাকবে এমন সন্দেহ একেবারেই ভিত্তিহীন।
আবদুল্লাহ আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের অবস্থান পুনর্বহাল করতে হবে মিয়ানমারের স্বীকৃত জাতিগোষ্ঠী হিসেবে। দাবি না মানা পর্যন্ত সংগ্রাম চলবে। দাবি যদি না মানা হয়, তাহলে সংগ্রাম ‘অন্য স্তরে’ নেয়া হবে।
আবদুল্লাহর সঙ্গে আরসার সামরিক কমান্ডারের প্রতিদিনই কথা হয় বলে এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এশিয়া টাইমসের সাংবাদিক মাইক উইনচেস্টারের ধারণা, আবদুল্লাহ শহরে থেকে পড়াশোনা করেছেন। কথাবার্তায় তাকে উচ্চ শিক্ষিত বলেই তার মনে হয়েছে।
তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কেউ যেন আরসাকে জঙ্গি সংগঠন মনে না করেন। কিংবা মিয়ানমার সরকারের সেঁটে দেয়া তকমা বিশ্বাস না করেন। সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকারও আহ্বান করেন তিনি।
বাঙালি জঙ্গি হিসেবে অভিযোগ করে ২৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনটিকে বেআইনি ঘোষণা করে মিয়ানমার সরকার। মিয়ানমারের দাবি, সেখানকার রোহিঙ্গারা আসলে বাঙালি। মিয়ামারের তারা যে নাগরিক, সেটা মানতেই চায় না মিয়ানমার।
বাংলাদেশ থেকে সেখানো তো কোনো রোহিঙ্গা যায়নি; বরং সেখান থেকে বহু রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে পালিয়ে গেছে। পাকিস্তান, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা জীবন বাঁচানোর আশায় পাড়ি জমিয়েছে।
২০১২ সালের সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কারণে দেয়ালে পিঠ থেকে গিয়ে ২০১৩ সাল থেকে সংগঠনটি কার্যক্রম শুরু করে। ২০১২ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়। বাংলাদেশে পালিয়ে আসে ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা। রাখাইন প্রদেশের রাজধানীর কাছে অবরুদ্ধ বস্তিগুলোতে বর্তমানে আটকে আছে আরও এক লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা।
কয়েকদিন আগের হামলা সম্পর্কে আবদুল্লাহ বলেন, আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না; আত্মরক্ষার জায়গা থেকে হামলা চালানো হয়েছে। বেশ কিছু স্থানে রোহিঙ্গাদের গুলি করে হত্যার জবাব দিতেই ওই হামলা চালানো হয়েছে।
অং সান সুচি সম্পর্কে আবদুল্লাহ বলেন, সঠিক এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য হয়তো তার কাছে যায় না। সেনাবাহিনী এবং তার দলের রাখাইন সদস্যদের ফাঁদে পড়ে আছেন তিনি। যারা বিকৃত তথ্য দিচ্ছে তাকে। তার তো ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি দেখে আসা নৈতিক দায়িত্ব।
সুচিও এআরসেএ’কে জঙ্গি সংগঠন বলে দাবি করেছেন। মিয়ানমারের গণমাধ্যমকে সংগঠনটির পক্ষে কথা না বলার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র : এবিসি নিউজ,
কেএ/আইআই