পরমাণু মুক্ত বিশ্ব গড়ার শপথে হিরোশিমা দিবস পালিত
বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক হামলার কলঙ্কজনক অধ্যায়ের ৭২তম বার্ষিকী পালন করছে জাপান। বিশ্ব ইতিহাসের এই কলঙ্কজনক দিনে (৬ আগস্ট) জাপানের হিরোশিমায় ‘লিটল বয়’ খ্যাত পারমাণবিক বোমা হামলা চালায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
জাপানই একমাত্র দেশ; যেখানে ১৯৪৫ সালে পরমাণু হামলা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে ‘কালো দিবস’ নামে পরিচিত এই দিনে মার্কিন হামলায় প্রাণহানি ঘটেছিল ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল জাপানের হিরোশিমা।
রোববার দিনটি উদযাপন উপলক্ষে জাপানের হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে হাজার হাজার জাপানি নাগরিক সমবেত হন। এসময় শহরটির মেয়র পরমাণু বোমা মুক্ত বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানান।
চীনা সংবাদমাধ্যম সিনহুয়া বলছে, হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে রোববার ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ সমবেত হয়েছিলেন নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। পিস মেমোরিয়ালে অংশ নিয়েছেন ১৯৪৫ সালে মার্কিন হামলায় বেঁচে যাওয়া জাপানিরাও। বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশের মানুষ, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার সদস্যরা হিরোশিমার কালো অধ্যায় স্মরণে অংশ নেন।
হিরোশিমার মেয়রকাজুমি মাতসু বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পরমাণুমুক্ত বিশ্ব গড়তে সবার প্রতি আহ্বান জানান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে অংশ নিয়েছেন।
এসময় তিনি বলেন, ‘তিনটি অ-পরমাণু নীতি (উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ অথবা জাপানের ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্রের অনুমোদন নয়) সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে। এছাড়া পরমাণু মুক্ত বিশ্ব গড়তে পরমাণু, অ-পরমাণু দেশগুলোর নেতৃত্ব দিতে জাপান দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
পারমাণবিক হামলা কেড়ে নেয় ২ লাখ প্রাণ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি পারমাণবিক হামলার শিকার হয় জাপান। এর মধ্যে প্রথমটি ছিল ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট হিরোশিমায় এবং দ্বিতীয় হামলা হয় নাগাসাকিতে। প্রথম হামলার তিনদিনের মাথায় (৯ আগস্ট) নাগাসাকিকে ধুলায় লুটিয়ে দেয় মার্কিন পরমাণু হামলা।
হিরোশিমায় মার্কিন পরমাণু হামলায় প্রাণ যায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষের। নাগাসাকিতে নিহত হয় প্রায় ৭৪ হাজার জাপানি। হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে অনেকের প্রাণহানি ঘটে। এছাড়া অনেকেই রেডিয়েশন সংক্রমিত হয়ে প্রাণ হারাণ। তবে বেঁচে যাওয়া অনেকে মাসের পর মাস বছরের পর বছর দুঃসহ যন্ত্রণা নিয়ে দিন পার করছেন।
১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দেয়। জাপানিদের অনেকেই মার্কিন হামলাকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করেন। তারা মনে করেন, নজিরবিহীন ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্রের ব্যবহার করে বেসামরিক নাগরিকদের টার্গেট করে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র।
কিন্তু অনেক মার্কিনি মনে করেন যে, তারা একটি রক্তাক্ত সংঘাতের অবসান ঘটিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত জীবন রক্ষা করেছে। এই যুক্তি দেখিয়ে মার্কিনিরা হিরোশিমা ও নাগাশাকিতে বোমা হামলার ঘটনাকে ন্যায়সঙ্গত মনে করেন।
ছয় যুগ আগের এই হামলার স্থল পরিদর্শনে গত বছরের মে মাসে প্রথমবারের মতো কোনো ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামা হিরোশিমা সফরে যান। ওই সময় তিনি হিরোশিমায় হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানান।
সূত্র : সিনহুয়া, আল-জাজিরা।
এসআইএস/আরআইপি