কোবিন্দ সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
একেই বলে ভাগ্য। মাত্র দেড় মাস আগে বিহারের রাজ্যপাল থাকাকালীন সপরিবারে হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে রাষ্ট্রপতির সামার রিট্রিটে ঢুকতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রাষ্ট্রপতি ভবনের অনুমতি নেই, এই যুক্তিতে রক্ষীরা তাকে গেট থেকে ফিরিয়ে দেয়।
তখন তিনি জানতেন না রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হিসেবে কয়েকদিনের মধ্যেই তার নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। আর এখন দেশের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে সিমলার ওই রাজকীয় প্রাসাদই হবে তার গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের ঠিকানা।
তিনি ভারতের ১৪তম রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ। ভারতের নির্বাচন কমিশন বৃহস্পতিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে বিজয়ীর ঘোষণা দিয়েছে। ৭১ বছর বয়সী রামনাথ কোবিন্দ প্রতিদ্বন্দ্বী মীরা কুমারকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছেন।
লোকসভা, রাজ্যসভার সদস্যদের পাশাপাশি রাজ্যের বিধায়করা তাকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। আগামী ২৫ জুলাই ভারতের নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন রামনাথ কোবিন্দ। তাকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি।
মাত্র কয়েকদিন আগেও অনেকের কাছেই অপরিচিত কোবিন্দ এখন ভারতের রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন। আসুন জেনে নেয়া যাক কে এই কোবিন্দ।
১. জন্ম উত্তরপ্রদেশের কানপুর দেহাত জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম পারোঙ্খের এক দলিত পরিবারে। নিজের পৈতৃক বাড়ি গ্রামবাসীদের উদ্দেশে দান করে দিয়েছেন তিনি। ওই বাড়ি এখন বিয়েবাড়িতে পরিণত হয়েছে; গ্রামে বিয়ে হলেই বরযাত্রীদের রাখার জায়গা হিসেবে ওই বাড়ি ব্যবহার করা হয়।
২. রামনাথ কোবিন্দ হবেন উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল এই রাজ্য থেকে দেশের মোট ৯ জন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু কোবিন্দের আগে এ রাজ্যের কেউ রাষ্ট্রপতি হননি।
৩. ভারতের আমলারা যে মর্যাদাবঞ্জক ইউপিএসসি পরীক্ষা দিয়ে চাকরিতে ঢোকেন, কোবিন্দ তাতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। কিন্তু আইএএস সার্ভিসের বদলে অ্যালায়েড সার্ভিসে মনোনীত হওয়ায় সে চাকরি তিনি আর করেননি।
৪. বিজেপি-তে যোগদান করার আগে তিনি ১৯৭৭ সালে তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাইয়ের ব্যক্তিগত সচিব বা প্রাইভেট সেক্রেটারি হিসেবেও কাজ করেছেন।
৫. বিজেপিতে যোগদান করার পর তিনি দলিত শ্রেণির একজন নেতা হিসেবে উঠে আসেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি বিজেপির দলিত মোর্চার প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
৬. উত্তর প্রদেশে দলিত নেত্রী হিসেবে মায়াবতীর যখন দ্রুত উত্থান হচ্ছে, তখন বিজেপি রামনাথ কোবিন্দকে মায়াবতীর পাল্টা দলিত মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিল। বছরকয়েক আগেও বিজেপি নেতা রাজনাথ সিং রাজ্যের দলিত এলাকাগুলোতে নির্বাচনী প্রচারের সময় সবসময় কোবিন্দকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন।
৭. লোকসভার ভোটে না জিতলেও রামনাথ কোবিন্দ দুই বার ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ রাজ্যসভার সদস্য হয়েছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত টানা ১২ বছর তিনি রাজ্যসভার এমপি ছিলেন।
৮. রামনাথ কোবিন্দ নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরেও ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি ভারতের প্রতিনিধি হিসেবে ভাষণও দেন।
৯. ২০১৫ সালের ৮ আগস্ট তাকে বিহারের রাজ্যপাল (গভর্নর) পদে নিয়োগ করা হয়।
গত ১৭ জুলাই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের পর বৃহস্পতিবার ভোট গণনার পর তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আগামী ২৪ জুলাই বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে ২৫ জুলাই শপথ নিবেন তিনি।
কেএ/আরআইপি
