আমিই অ্যাডলফ হিটলার : দাবি ১২৮ বছরের বৃদ্ধের
বয়স মাত্র ১২৮ বছর! মানুষের বেঁচে থাকার গড় আয়ুর থেকে অনেকটাই বেশি। কিন্তু হারমান গুটেনবার্গ শুধু বহাল তবিয়তেই আছেন এমনটা নয়, তার এক দাবি ঘিরে আপাতত সরগরম দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশ।
আর্জেন্টিনার সালতার বাসিন্দা ওই বৃদ্ধের দাবি, তিনিই অ্যাডলফ হিটলার! এল প্যাট্রিওটা নামের একটি সংবাদপত্রকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমন দাবিই করেছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে হারমান গুটেনবার্গ নামে পরিচিত ওই বৃদ্ধ জানিয়েছেন, ১৯৪৫ সালের বিপর্যয়ের পর তিনি আর্জেন্টিনায় চলে আসেন। আত্মগোপন করতে নিজের নাম বদলে নেন। জার্মান গুপ্তচররা হারমান গুটেনবার্গের নামে পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর পরাজয়ের পর ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন হিটলার। এ কথা ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। এ তথ্যকে মেনে নিয়েছেন জার্মানরাও। কিন্তু সম্প্রতি আর্জেন্টিনার ওই বৃদ্ধের দাবি নতুন করে ভাবাচ্ছে, ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আদৌ কি মৃত্যু হয়েছিল হিটলারের?
২০১৬ সালের জুলাইয়ে এবেল বাস্তির লেখা ‘হিটলার ইন এক্সাইল’ (নির্বাসনে হিটলার) নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটিতে দাবি করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বাহিনীর পরাজয়ের পর, হিটলার আর্জেন্টিনায় চলে আসেন এবং সেখানে দশ বছর আত্মগোপন করে থাকেন। এর পর তিনি প্যারাগুয়ে চলে যান। তবে এবেল বাস্তির লেখা বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি সে দেশেই মৃত্যু হয় হিটলারের। মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) প্রকাশিত একটি রিপোর্টেও দাবি করা হয় যে, হিটলার মরেননি, তিনি আর্জেন্টিনায় পালিয়ে যান।
রুশ সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক এক প্রতিবেদনে বলছে, আর্জেন্টাইন বৃদ্ধের আরও দাবি, দীর্ঘ ৭০ বছর তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন। এই সময় তিনি ইসরায়েলের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ-এর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘ দিন। বৃদ্ধের কথায়, সে জমানায় মোসাদ-এর কাজ ছিল যুদ্ধাপরাধী নাৎসি বাহিনীর শীর্ষ নেতাদের খুঁজে বের করা। ১৯৬০ সালে নাৎসি বাহিনীর লেফ্টেন্যান্ট কর্নেল অ্যাডলফ এইচমানের গ্রেফতার মোসাদ-এর সাফল্যের অন্যতম উদাহরণ।
কিন্তু এই বয়সে পৌঁছে মানুষের স্মৃতিশক্তি কতটা নির্ভরযোগ্য? গুটেনবার্গের এসব দাবিকে প্রলাপ বলেই মনে করছেন অনেকে। এমনকি বৃদ্ধের স্ত্রী ৫৫ বছর বয়সী অ্যাঞ্জেলা মার্টিনেজেরও দাবি, তার স্বামী অ্যালঝাইমার’স-এর শিকার। স্মৃতিভ্রংশের ফলেই এ সব বলছেন গুটেনবার্গ। অ্যাঞ্জেলা আরও বলেন, ২০১৫ সাল পর্যন্ত কখনও এই বিষয়ে কোনও কথা বলেননি গুটেনবার্গ। তবে তার বিশ্বাস, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গুটেনবার্গ হয়তো নাৎসি বাহিনীতেই ছিলেন। সে সময় ইহুদিদের প্রতি হওয়া বর্বরতায়, নাৎসি বাহিনীর কৃতকর্মে তিনি আজ অনুতপ্ত। তাই ইদানীং এই সব কথা বলছেন।
অ্যাঞ্জেলার ধারণা যাই হোক না কেন, গুটেনবার্গ যখন নিজেকে হিটলার বলে দাবি করে একের পর এক নানা দাবি, তথ্য সামনে আনছেন, তখন কিছুটা কাকতালীয় ভাবেই আর্জেন্টিনার বুয়েনেস আইরেসের একটি বাড়ির গুপ্ত কুঠুরির মধ্যে থেকে সন্ধান মিলেছে নাৎসিদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ভাণ্ডার।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল আত্মহত্যা করেন হিটলার। তবে অনেক ইতিহাসবিদ এটাও মনে করেন যে, সেই সময় আর্জেন্টিনায় গা ঢাকা দিয়েছিলেন তিনি। এই মতামতের পক্ষে একাধিক প্রমাণ এবং যুক্তিও সামনে এনেছেন তারা। তবে আর্জেন্টিনার এই ১২৮ বছরের বৃদ্ধর বক্তব্য সত্যি না অ্যালঝাইমার’স-এ আক্রান্ত মানুষের প্রলাপ, সে বিষয়ে ধোঁয়াশা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। হিটলার বেঁচে থাকলে এখন তার বয়স ১২৮ বছরই হতো। তবে অ্যালঝাইমার’স-এ আক্রান্ত একজন বৃদ্ধ কী করে ৭০ বছর আগের এবং তার পরবর্তী সময়ের সব তথ্য দিচ্ছেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না অনেকেই!
বৃদ্ধের শেষ ইচ্ছে, তিনি তার (অ্যাডলফ হিটলারের) ‘আত্মজীবনী’ লিখবেন। তার বিশ্বাস, এই আত্মজীবনী বিশ্বের মানুষের কাছে হিটলার সম্পর্কে অনেক ধারণা পাল্টে দেবে। মানুষ চিনবে এক অচেনা, নতুন হিটলারকে! আনন্দবাজার।
এসআইএস/আরআইপি