কাতার এবং মধ্যপ্রাচ্য ভাবনা
কাতারের সঙ্গে আটটি দেশ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। তাদের অভিযোগ, মুসলিম ব্রাদারহুড, ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে সহায়তা করছে কাতার। তবে গত ২৩ মে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ইরানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই মূলত এই সংকটের সূত্রপাত।
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) বরাত দিয়ে কাতার দাবি করছে, রুশ হ্যাকাররা কাতারের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম হ্যাক করে ওই ভুয়া সংবাদ সম্প্রচার করেছে।
কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেই ক্ষান্ত হয়নি দেশগুলো। কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের পর কাতার থেকে নিজেদের দেশের নাগরিকদের ফিরে আসার দুই সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়ে একই সময়ের মধ্যে কাতারিদেরও ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে কাতারের জন্য আকাশসীমা, সমুদ্র এবং স্থলবন্দরও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। খাদ্য আমদানিনির্ভর কাতার এতে করে কার্যত একঘরে হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, কাতারকে একঘরে করার কৃতিত্ব তার। সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় জঙ্গি অর্থায়ন ঠেকানোর জন্য মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি সবাইকে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নেরও আহ্বান জানান। ট্রাম্প দাবি করেছেন, বিশ্ব নেতারা কাতারের সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন তা তার কথাতেই।
এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প লিখেছেন, সৌদি আরবসহ কয়েকটি দেশ বলছে, তারা চরমপন্থা মোকাবেলায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে। তা দেখে খুব ভাল লেগেছে। কাতারকে উদ্ধৃত করে তারা তাদের সিদ্ধান্তও জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদ শেষ করার লক্ষ্যে সম্ভবত এটাই শুভ সূচনা।
এগুলো দেখে ৫০ বছর আগের ইসরায়েলের কথা বার বার মাথায় আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোল্যান্ডে ৬০ লাখ লোক নিহত হয়েছিল। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর হাতে নিহতদের মধ্যে ৩০ লাখই ছিল ইহুদি; বাকিরা খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। নাৎসি বাহিনীর হাতে ইউরোপে প্রায় ৬০ লাখ ইহুদি হত্যার পর ইহুদিদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করা হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে এসে ইসরায়েল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তন করা হয়। এরপর সেখান থেকে ইহুদিদের অত্যাচারে প্রায় সাড়ে সাত লাখ ফিলিস্তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। তার পর আর কখনো ইসরায়েলে তারা ফিরে যেতে পারেনি।
কিন্তু ইহুদিদের তো বরাবরই অপছন্দ করত অারব বিশ্ব। ইসরায়েলে ইহুদি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা তারা মেনে নিতে পারেনি। অন্যদিকে ইসরায়েলও জানত যে তার প্রতিবেশি আরব দেশগুলো তাকে ধ্বংসের চেষ্টা করবে। উভয় পক্ষই বুঝতে পারছিল যে একটি যুদ্ধ নিকটবর্তী। উভয় পক্ষের মধ্যে সংকট চরমে উঠতে থাকে। ১৯৫০ এবং ৬০-এর দশকের স্নায়ুযুদ্ধ সেই সংকটে আরও ঘি ঢালতে থাকে।
সেসময় আধুনিক বিমান ব্যবস্থা দিয়ে মিসরকে সাহায্য করেছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন। আর আমেরিকার সুনজর ছিল ইসরায়েলের প্রতি। ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের কাছ থেকে ১৯৬০ সালে যুদ্ধ বিমান এবং ট্যাংক কিনেছিল ইসরায়েল। ইসরায়েল একটি দক্ষ সেনাবাহিনী গড়ে তোলে ১৯৬৭ সালের মধ্যেই। তাছাড়া পরমাণু শক্তি অর্জনের কাছাকাছি চলে যায় দেশটি। সেসময় পরাজয়ের কথা না ভেবে প্রতিটি যুদ্ধেই জেতার চিন্তা করেছে দেশটি। সেইভাবেই এগিয়েছে তারা। অন্যদিকে মিসর এবং সিরিয়া সামরিক শক্তির দিকে তেমন মনোযোগী হয়নি।
অন্যদিকে উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো মুখে ঐক্য এবং জাতীয়তার বুলি আওড়াতো। সেগুলো ছিল কথার কথা। লোক দেখানো আলাপ ছাড়া আর কিছুই না। বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যেতো না। যতোটা স্পষ্টভাবে দেখা যায় তাদের বিভক্তি। জর্ডান এবং সৌদি আরবের চেষ্টায় সিরিয়া এবং মিসরে অভ্যুত্থানের চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে করতো দেশগুলোর সরকার।
আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে ক্রমাগত তিক্ততা এবং সীমান্তে ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র সংঘাতের ফলে ১৯৬৭ সালের যুদ্ধ শুরু হয়। ইসরায়েল-মিসর সীমান্ত তুলনামূলক শান্ত ছিল। সবচেয়ে বড় সংঘাতটি হয়েছিল সিরিয়ার সঙ্গে ইসরায়েলের। পশ্চিমা বিশ্ব জানত কোন পক্ষ বেশি শক্তিশালী। আরব দেশগুলো যদি ইসরায়েলে একযোগে হামলা চালায়, তাহলে ইসরায়েলের পরাজয় অনিবার্য।
এরই মধ্যে ১৯৬৭ সালের ২ জুন ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তারা যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়ে যান। রাজনীতিবিদদের তারা বুঝিয়েছিলেন, ইসরায়েল মিসরকে পরাজিত করতে পারবে। তার কিছুদিন আগে ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধান গোপনে ওয়াশিংটন সফর করেন। তিনি আমেরিকার নেতৃত্বকে জানিয়েছিলেন ইসরায়েল যুদ্ধ করতে চায়। ইসরায়েলকে যুদ্ধে যাবার জন্য আমেরিকাও সম্মতি দেয়।
মাত্র তিন দিনের মাথায় বিমান হামলার জন্য তৈরি হয়ে যায় ইসরায়েল। তাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল মিসরকে দিয়ে শুরু করে আরবদের বিমান ধ্বংস করে দেয়া। ইসরায়েল তার সামরিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কয়েক বছর ধরে আরবদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার গোপন নকশা জোগাড় করেছিল। মিসরের সেনাবাহিনীর প্রধান এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যখন সিনাইয়ের একটি বিমান ঘাঁটিতে বৈঠক করছিলেন তখন ইসরায়েলি বিমান প্রথম আক্রমণ করে। প্রথমে তো বিষয়টি বুঝতেই পারেনি মিসরের সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা ভেবেছিলেন মিসরের সেনাবাহিনীরই একটি অংশ হয়তো বিদ্রোহ করেছে।
এই ফাঁকে সারাদিনে জর্ডান এবং সিরিয়ার প্রায় অধিকাংশ বিমান ঘাঁটি ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েলের বিমান বাহিনী। পুরো আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চলে যায় তাদের নিয়ন্ত্রণে। ইসরায়েল অবশ্য জর্ডানকে সতর্ক করে দিয়েছিল, যাতে তারা যুদ্ধে না জড়ায়। কিন্তু জর্ডান সেটি গ্রাহ্য করেনি। মিসরের সেনা কর্মকর্তারা বুঝতে পারছিলেন তারা প্রথম দিনেই যুদ্ধে অনেকটাই হেরে গেছেন। কায়রোর সেনা সদরে তখন আতঙ্ক ভর করেছে।
পাঁচদিনের যুদ্ধে মিসর, সিরিয়া এবং জর্ডানের সেনাবাহিনী ইসরায়েলের কাছে পরাস্ত হয়। ইসরায়েলের গাজা উপত্যকা, মিসরের সিনাই মরুভূমি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি এবং জর্ডানের কাছ থেকে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়।
এই প্রথমবারের মতো ইহুদিদের জন্য পবিত্র জেরুজালেম ইসরায়েলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর সেখান থেকে বহু ফিলিস্তিনিদের বিতাড়িত করা হয়। আর ১৯৬৭ সালের পর থেকে ইসরায়েলকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা শুরু করে আমেরিকা। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর প্রতি মার্কিন প্রশাসন মুগ্ধ হয়ে যায়। কারণ তারা আরব বাহিনীকে পরাজিত করেছে। আরবদের কাছে ইসরায়েল পরিচিত হয়ে ওঠে দখলদার হিসেবে। নতুন ইহুদি বসতি নির্মাণ শুরু করে ইসরায়েল। দশকের পর দশক চলতে থাকে সংঘাত এবং উভয় পক্ষের মধ্যে তিক্ততা বেড়েছে বহুগুণে। উভয় পক্ষের জন্য পবিত্র স্থান জেরুজালেম নিয়ে অস্থিরতাও বেড়েছে।
মাঝখানে পেরিয়ে গেছে ৫০ বছর। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ১৯৮০-এর দশকে ইরাক-ইরান যুদ্ধ একটা বড় ঘটনা। সীমান্ত বিরোধ এবং ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া জঙ্গিদের ইরানের মদদ দেয়ার অভিযোগে ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বাহিনী পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবৈধভাবে ইরানি ভূখন্ডে আক্রমণ এবং অণুপ্রবেশ করে।
এদিকে, ১৯৯১ সালে কুয়েতে ঘটে যায় বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ তেল দুর্ঘটনা। প্রথম গালফ যুদ্ধ চলাকালীন এ ঘটনা ঘটে। মার্কিন সৈন্যদের থামাতে ইরাকি বাহিনী কুয়েতের তেলকূপের ভাল্ব ও পাইপলাইন খুলে দেয়। এই তেলের স্রোতে ইরাকি বাহিনী বোমা ফেলে। বোমাবর্ষণের ফলে জ্বলে ওঠে আগুন। পার্সিয়ান উপসাগরে তেল ছড়িয়ে পড়তে থাকে। ছড়িয়ে পড়ে আগুন। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দুইশ ৪০ মিলিয়ন গ্যালন তেল নিঃসরণ ঘটে। বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে তেল। এ ঘটনায় ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে।
যদিও পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সূচনা ১৯৯০ সালের আগস্টের ২ তারিখ। ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম নামে সমধিক পরিচিত এই যুদ্ধ সংঘটিত হয় ইরাক এবং ৩৪টি দেশের জাতিসংঘ অনুমোদিত যৌথ বাহিনীর মধ্যে। ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে ইরাকের কুয়েত আগ্রাসন এবং কুয়েতি ভূখন্ড দখলের প্রেক্ষিতে ইরাকি বাহিনীর হাত থেকে কুয়েতকে মুক্ত করাই ছিল এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য।
ইরাক ১৯৯১ সালের চুক্তি অমান্য করে গণবিধ্বংসী অস্ত্র নির্মাণ করছে এবং তাদের কাছে এ ধরনের অস্ত্রের মজুদও আছে বলে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে। বলা হয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র রাষ্ট্রগুলোর জন্য ইরাক বড় ধরনের হুমকি। এরকম অভিযোগে ২০০৩ সালের ২০ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত বাহিনী ইরাক আগ্রাসন শুরু করে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে দেশটির প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এবারে সংকট তৈরি হয়েছে কাতারে। আর দৃশ্যত সেই সংকট তৈরি করেছে আরববিশ্বের দেশগুলোই। বাইরে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন ট্রাম্প তথা যুক্তরাষ্ট্র। কাতারের সংকট সমাধানের জন্য ৫০ বছর আগের ইসরায়েলের সে যুদ্ধকে উপেক্ষা করা যাবে না। কিংবা ইরাক-ইরান যুদ্ধ, গালফ দেশগুলোর যুদ্ধ বাদ দিয়ে বিচার করা যায় না।
৫০ বছর আগেও ইসরায়েলের হয়ে কলকাঠি নেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যে যুক্তরাষ্ট্র ছিল আরবদের বিরুদ্ধে; আজ সেই যুক্তরাষ্ট্রের কথাতেই মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি শুরু হয়েছে। যখন কুয়েতের সঙ্গে ইরাক যুদ্ধ করেছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র ছিল কুয়েতের পক্ষে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধ করেও মার্কিনিদের বন্ধু হতে পারেনি ইরান। মিসরে হামলা চালিয়েছে মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরায়েল। একইভাবে আরববিশ্বের দেশগুলো কুয়েতের হয়ে গালফ যুদ্ধ করেছে; এবার কুয়েত কিন্তু কাতারের সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে। অথচ আরববিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিসর গেছে কাতারের বিপক্ষে। সেই হিসেবে সত্যিই অনেক পরিবর্তন ঘটেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে।
কাতারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। তুরস্কও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। তবে আমদানিনির্ভর কাতার ভয়াবহ সংকটে পড়তে যাচ্ছে। সেই সংকট আবার দাবানল হয়ে মধ্যপ্রাচ্য পুড়িয়ে না দেয়, সে আশঙ্কা ভর করছে। আরব বসন্ত যেভাবে শুরু হয়েছিল, এবার একের পর এক রাষ্ট্র সেভাবে কাতারকে প্রত্যাখ্যান করেছে; কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। যুদ্ধবাজ যুক্তরাষ্ট্র তো সবসময় বিশ্বে অশান্তি চায়। তাদের তো যুদ্ধ ছাড়া চলবে না। সেকারণে একের পর এক শত্রুর খোঁজ করে দেশটি।
উত্তর কোরিয়া নিয়ে এরই মধ্যে প্রচারণা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র; যেভাবে ইরাকের ব্যাপারে করেছিল। সিরিয়া নিয়েও বারবার তারা মানবিকতার কথা বলে বোমা হামলা চালিয়েছে। সেই যুক্তরাষ্ট্রের চালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করছে।
ইরানে হামলা চালানোর কারণ হিসেবে ইরাক উল্লেখ করেছিল তাদের দেশে শিয়াদের মদদ দিচ্ছে ইরান। আবার ইসরায়েলের সঙ্গে আরববিশ্ব যুদ্ধ করেছিল অনেকটা ‘বিধর্মী’দের দমনের নামে। কুয়েতের সঙ্গে ইরাক যুদ্ধ করেছে তাহলে কীসের ভিত্তিতে? সেখানে তো মোট মুসলিমদের ৬৫ শতাংশই সুন্নি। আবার কাতারও তো সুন্নিদের দেশ হওয়া সত্ত্বেও আরব বিশ্ব তাদের বয়কট করছে; একঘরে করে দিয়েছে।
আসলে এভাবে ধর্ম দিয়ে বিবেচনা করলে যুদ্ধের হিসেব মিলবে না। ধর্মই যদি সব হতো, তাহলে ৩৫ শতাংশ শিয়াদের দেশ কুয়েত কাতারের সংকট সমাধানে এগিয়ে আসতো না। যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরববিশ্ব যুদ্ধ করেছে, তাদের মদদদাতার সঙ্গে হাত মেলাতো না। তারা যতই জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলুক, মানবিকতার দোহাই দিক; আসল উদ্দেশ্য ভিন্ন। এটা ক্ষমতার রাজনীতি। যুদ্ধবাজ যুক্তরাষ্ট্রের টিকে থাকার রাজনীতি। যেটা মার্কিন প্রেসিডেন্টের সৌদি সফরের দিকে তাকালেই দেখা যাবে।
মধ্যপ্রাচ্যে সফরের অংশ হিসেবে ট্রাম্প সৌদি আরবে যাওয়ার পর সর্বমোট ১শ ১০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে একশ ৫০টি অত্যাধুনিক ব্ল্যাকহক হেলিকপ্টার কিনবে সৌদি আরব। এক সময় সোভিয়েত রাশিয়ার লাল পতাকার জুজুর ভয় দেখিয়ে অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ৯/১১য়ের টুইন টাওয়ার হামলার পর মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে উপস্থাপন করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অথচ আরব বিশ্বের দেশগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে, বাধ্য হয়ে নাকি না বুঝে দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দাবাড়ুর চালে কাতার তথা মধ্যপ্রাচ্যে এবার কী ঘটতে যাচ্ছে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
কেএ/টিটিএন/পিআর