আতঙ্কিত কাতারে খাবার মজুদের হিড়িক
খাদ্য সরবরাহ ও মজুদে কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে কাতারের বাসিন্দাদেরকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে দেশটির অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (এমইসি)। মালদ্বীপসহ আরব বিশ্বের প্রভাবশালী সাত দেশ কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় মন্ত্রণালয়ের এই আশ্বস্তে স্বস্তি পাচ্ছেন না দেশটির নাগরিকরা।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে কার্যত একঘরে হতে যাওয়া আমদানি নির্ভর কাতারের বাসিন্দাদের মধ্যে খাদ্য সংকটের তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা নিত্য-খাদ্য ও পণ্য সামগ্রী কিনতে প্রচুর ভিড় জমাচ্ছেন দেশটির বিভিন্ন শপিং সেন্টার ও দোকানে। কাতারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, প্রধান খাদ্য সামগ্রীর পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকবে, কারণ অধিকাংশ পণ্যের দাম নির্দিষ্ট।
মন্ত্রণালয় বলছে, রমজান শুরুর আগে আগেই চার শতাধিক পণ্যের দাম কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ৫০ হাজারের বেশি আইটেমের পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এক পোস্টে কাতারের অর্থ ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বিভিন্ন উৎস ও দেশ থেকে সব ধরনের পণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি অব্যাহত রয়েছে। স্থলপথে কাতারে পৌঁছানো পণ্য-সামগ্রী নিয়েই মানুষের প্রধান দুশ্চিন্তা। আমদানিকৃত পণ্যের বেশিরভাগই বিমান ও সমুদ্র পথে কাতারে পৌঁছে। দেশটির মাংসের বড় একটি অংশের চাহিদাই মেটানো হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানিকৃত পশু থেকে। শাক-সবজির বৃহৎ একটি অংশ আসে বাংলাদেশ এবং ভারত থেকে আকাশপথে।
উপসাগরীয় অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থনের অভিযোগ এনে সোমবার কাতারের সঙ্গে সাতটি দেশ তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেয়। দেশগুলো হচ্ছে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লিবিয়া, ইয়েমেন ও মালদ্বীপ। মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্যাদারহুড, ইসলামিক স্টেট (আইএস), অাল কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে কাতারের সহায়তার অভিযোগে দোহার সঙ্গে একযোগে সম্পর্ক ছিন্নের এ ঘোষণা আসে।
এর পর পরই সন্ধ্যার দিকে কাতারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের পোস্ট দিতে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের এই অস্থিতিশীলতা নিয়ে আতঙ্কিত দেশটির নাগরিকরা পণ্য-সামগ্রী কিনতে ভিড় জমান সুপার মার্কেটে। মুহূর্তের মধ্যেই চাল, ডাল, তেল, মাংস এবং অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর সংগ্রহের ব্যাপক তোড়জোড় দেখা যায়। এসব পণ্যের অধিকাংশ আমদানি করা হয় বিমান ও সমুদ্র পথে। তবে মঙ্গলবার সকালের দিকে সুপার মার্কেটগুলোতে পর্যাপ্ত পণ্য থাকায় আতঙ্ক কিছুটা কমে যায়।
এদিকে, আরব বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর নাগরিদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের নজিরবিহীন এ সংকট উত্তরণের চেষ্টা চলছে উল্লেখ করে নাগরিকদের পুরোপুরি নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
মঙ্গলবার কাতারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে নাগরিক ও সেদেশে বসবাসকারী প্রবাসীদের এ নজরদারির তথ্য জানিয়ে দিয়েছে। মোবাইলে ফোনে পাঠানো ক্ষুদে বার্তায় বলা হয়েছে, দেশে বসবাসকারী সব নাগরিক ও প্রবাসীদের সামাজিক যোগাযোগের সব ধরনের মাধ্যমে নজরদারি করছে মন্ত্রণালয়। এতে দেশবিরোধী, অনাকাঙ্ক্ষিত ও ভূয়া বার্তার আদান-প্রদান থেকে বিরত থাকতে ও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের অ্যাজেন্ডা সমর্থন ও গণমাধ্যমে কাতার প্রচার করছে বলে অভিযোগ এনে সম্পর্ক বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি দোহা সঙ্গে আকাশ ও স্থলসীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে রিয়াদ। মিসর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও সব ধরনের যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়া সৌদিতে কাতারের বিমানসংস্থা কাতার এয়ারওয়েজের লাইসেন্স বাতিল ও কার্যালয় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গুটিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছে রিয়াদ। দেশটির নাগরিকদের ওই সাত দেশ ত্যাগের জন্য ১৪ দিনের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।
সূত্র : ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস, রয়টার্স, খালিজ টাইমস।
এসআইএস/পিআর