চীনকে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি উ. কোরিয়ার
অন্যতম মিত্র ও প্রতিবেশি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উল্টো দিকে মোড় নিতে শুরু করেছে উত্তর কোরিয়ার। বেইজিংকে ভয়াবহ পরিণতির হুমকি দিয়ে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, চীন যদি ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চায় তাহলে দেশটিকে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম মিত্র প্রতিবেশি ও কূটনৈতিক সহায়তাকারী চীনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, চীনের নিরাপত্তার জন্য পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি বেইজিংয়ের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত।
ঐতিহাসিকভাবে ঘণিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্রে চীনের প্রতি এই প্রথম বিরল হুমকি এসেছে পিয়ংইয়ংয়ের কাছ থেকে। উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ’র এক প্রতিবেদনে চীনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দেশটি যদি আরো ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চায় তাহলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ।
পিয়ংইয়ংয়ের পারমাণবিক কর্মসূচির জেরে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে বেইজিংয়। একই সঙ্গে আশঙ্কা প্রকাশ করে বেইজিং বলছে, এই অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে উস্কানি দিচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
১৯৫০-৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধের রক্ত বেইজিং এবং পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করেছে। এশিয়ার জায়ান্ট এই রাষ্ট্র প্রতিবেশি ও বিশ্ব থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন কোরিয়াকে ব্যাপক বাণিজ্যিক ও বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কে তিক্ততা শুরু হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার জেরে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মাঝে আঞ্চলিক সংকট তৈরির আশঙ্কা করছে বেইজিং। উত্তেজনা এড়াতে প্রতিনিয়ত ওয়াশিংটন ও পিয়ংইয়ংকে জানাচ্ছে।
উত্তেজনার মাঝে গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তর কোরিয়া থেকে পরবর্তী বছরের জন্য কয়লা আমদানি স্থগিত করেছে বেইজিং। উত্তর কোরিয়ার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত এটি।
এদিকে, থেমে নেই চীনা গণমাধ্যমও। নতুন পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হলে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরো কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমেও। একই সঙ্গে ‘এই সময়ে ভুল করা থেকে বিরত’ থাকতে পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম কেসিএনএ’র প্রতিবেদক কিম চল চীনের ‘লজ্জাজনক মন্তব্যের’ নিন্দা জানিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলেছেন, ‘কোনো কিছুই পিয়ংইয়ংকে তার লক্ষ্য থেকে টলাতে পারবে না।’
এতে আরো বলা হয়েছে, ‘উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে; যা নিজের জীবনের মতো মূল্যবান। বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য চীনকে কখনো অনুরোধ করবে না উত্তর কোরিয়া।’
কেসিএনএ বলছে, ১৯৫০ সালে কোরীয় যুদ্ধের পর থেকে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে বাফার হিসেবে কাজ করছে পিয়ংইয়ং। একই সঙ্গে চীনের নিরাপত্তা ও শান্তিতে অবদান রাখছে। এজন্য পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি মিত্র এই দেশটির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
এদিকে, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির নিয়ন্ত্রণে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন। টিলারসনের এই মন্তব্যের পর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি বলেছেন, কোরীয় দ্বীপে পারমাণবিক সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি চীনের হাতে নেই।
সূত্র : এএফপি।
এসআইএস/আরআইপি