ইউনূসকে বাঁচাতে জয়কে হুমকি দেয় হিলারি প্রশাসন
নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক অনিয়ম তদন্ত বন্ধে ২০১২ সালের গোড়ার দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের ওপর চাপ দেওয়া হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ডেইলি কলারের গত মঙ্গলবারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। অনুসন্ধানী ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের নানা আর্থিক অনিয়মের ঘটনায় ২০১২ সালের গোড়ার দিকে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ সরকার। সে সময়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ওই তদন্ত বন্ধ করার জন্য তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র জয়ের ওপর চাপ দেয়া হয়। ওই সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন যিনি ইউনূসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিতি।
২০১০ থেকে ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত তারা জয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। উদ্দেশ্য ছিল তিনি যেন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত বন্ধে তার মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে রাজি করান। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালের গোড়ার দিকে ওই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
সজীব ওয়াজেদ জয় সে সময় বলেছিলেন, ‘১৭ বছর ধরে বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে কখনও তার কোনও সমস্যা হয়নি। তবে ড. ইউনূসের ব্যাপারে তদন্তের ঘটনায় মার্কিন কর্মকর্তারা তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে তদন্ত শুরুর হুমকি দেন।’
জয় ডেইলি কলারকে আরও বলেন, ‘তারা দফায় দফায় আমাকে বলেন, ইউনূসের অনেক প্রভাবশালী বন্ধু আছে। আর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্লিনটনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টিও গোপন কোনও ব্যাপার নয়।’
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন আটকাতে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ইউনূসের যোগসাজশের বিষয়টি উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে, গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ থেকে ইউনূসকে না সরাতে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে চাপ আসার কথাও স্বীকার করেন।
২০১১ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ১২০ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি বাতিল করে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার নিজ উদ্যোগে পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেই। ইতোমধ্যে সেতুটির প্রায় ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রিপাবলিকান পার্টিঘেঁষা ডেইলি কলারেরই এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্টপ্রার্থী হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় নিজ পদের প্রভাব খাটিয়ে ইউনূসকে এক কোটি ৩০ লাখ ডলারের তহবিল জুগিয়েছিলেন। অন্যদিকে, ইউনূস এক লাখ থেকে তিন লাখ ডলার ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে দান করেছিলেন।
ওই সময় ক্লিনটন ফাউন্ডেশন থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়।
২০১৫ সালে হিলারির ফাঁস হওয়া ই-মেইলেও ইউনূসের জন্য তদ্বিরের বিষয়টি প্রকাশ পায়। ইউনূসকে সরানোর কারণে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাপ আসার কথা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিভিন্ন সময়ে বলেছেন।
এমএআর/আরআইপি