যৌনশিক্ষায় ইউরোপের উৎসাহ গর্ভধারণে
পশ্চিমা বিশ্বে এতদিন যৌনশিক্ষার অর্থ ছিল কীভাবে নিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যায় এবং গর্ভধারণ ঠেকানো যায় সে সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা। কিন্তু এ চিত্রটাই এখন বদলাতে শুরু করেছে। ইউরোপজুড়ে যৌনশিক্ষা এখন নতুন একটি অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে খুব সন্তর্পনেই। আর তা হলো- যৌন সম্পর্ক আর গর্ভধারণকে ইতিবাচকভাবে দেখানো। আরো খোলাসা করে বললে, গর্ভধারণকে উৎসাহিত করাই এখন পশ্চিমের যৌন শিক্ষার একটি প্রধান লক্ষ্য।
ইউরোপের স্কুলগুলোতে ১৩-১৪ বছর বয়সী শিশুদের এখন শেখানো হচ্ছে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের বিভিন্ন দিক নিয়ে, একইসঙ্গে গর্ভধারণ সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব তৈরিতে কাজ করছেন শিক্ষকরা।
এর প্রধান কারণ ইউরোপের দেশগুলোতে জন্মহার মারাত্মকভাবে কমে আসা। গত ফেব্রুয়ারিতেই ইতালির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইতালি একটি মৃত্যু পথযাত্রী দেশ। তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল ঋণাত্বক জন্মহারের দিকে। জার্মানি পরিবার বড় করার খাতে মোটা অঙ্কের ভর্তুকি বরাদ্দ করেছে চুপিসারেই। গ্রিসের সাম্প্রতিক মন্দায় জন্মহার কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
পুরো ইউরোজোনেই অর্থনৈতিক মন্দার একটি ভূমিকা আছে এই ঋণাত্বক জন্মহারকে বেগবান করার ক্ষেত্রে। এছাড়া ৭০এর দশক থেকে শুরু হওয়া জন্মনিয়ন্ত্রণও এর একটি বড় কারণ। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ইউরোপে প্রতি ১০০ জন মানুষের ২৮ জনই এখন ৬৫ বা তার বেশি বছর বয়সী, জাতিসংঘ বলছে এই শতাব্দির শেষ নাগাদ এই হার দ্বিগুণ হবে, যা অত্যন্ত সতর্ক হওয়ার মতো বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বয়োবৃদ্ধদের এই হার বৃদ্ধি এবং জন্মহার কমে যাওয়া একইসঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সাংঘাতিকভাবে ব্যাহত করবে এবং পেনশন-নির্ভরতা বাড়াবে বলে মত বিশ্লেষকদের।
জাপান এরইমধ্যে কঠিনভাবে এই সমস্যা মোকাবেলা করছে। আয়ুসীমা বৃদ্ধি এবং জন্মহার হ্রাস সেখানে বয়োবৃদ্ধ জনসংখ্যা এতোটাই বাড়িয়ে তুলেছে যে, বৃদ্ধদের ব্যবহৃত ডায়াপার বিক্রির হার এখন সেখানে শিশুদের ডায়াপার বিক্রির চেয়ে অনেক বেশি।
তাই এ সমস্যা মোকাবেলায় যৌনশিক্ষাকে একটি উপায় হিসেবে ব্যবহারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে নিচ্ছে দেশগুলো। তবে সেক্ষেত্রে পাশার দানটা এবার গেছে উল্টে- গর্ভধারণ ঠেকানো নয়, বরং উৎসাহিত করা।
সূত্র. দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস
এসআরজে