হোয়াইট হাউসে বাংলাদেশি সাংবাদিকের কাজের অভিজ্ঞতা
হোয়াইট হাউসে থেকে প্রতিদিন যে সাংবাদিকরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের খবরাখবর সংগ্রহ করেন, তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের পেশাগত সম্পর্কটা কেমন থাকে সে বিষয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যেভাবে মূলধারার গণমাধ্যমের সঙ্গে রীতিমত যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে এবং হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করছেন তার পর এ নিয়ে কৌতূহল জাগাটা বেশ স্বাভাবিক।
হোয়াইট হাউসে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও সারা দুনিয়ার বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিনিধিরা নিয়োজিত থাকেন খবরাখবর সংগ্রহের জন্য। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই সাংবাদিকদের খবরাখবর জানানোর জন্য সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়। নিয়মিতভাবে প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলে এই নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা গেছে। শুরু থেকেই তিনি হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে তীব্র বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েছেন।
আগের প্রেসিডেন্টদের আমলে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকরা কিভাবে কাজ করেছেন? তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক কেমন ছিল সেটা জানতেই এক সাংবাদিকদের অভিজ্ঞতা জানার চেষ্টা করেছে বিবিসি।
ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপির ফটো সাংবাদিক হিসেবে প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে হোয়াইট হাউসে ছয় বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশি সাংবাদিক জুয়েল সামাদের।
তিনি সে সময়ে তার কাজের অভিজ্ঞতা ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, হোয়াইট হাউসের ব্রিফিং রুমে প্রায় প্রতিদিনই প্রেস ব্রিফিং হয় এবং সাধারণত প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি সেখানে কথা বলেন। এটি অন ক্যামেরা এবং অন রেকর্ড প্রেস ব্রিফিং। অর্থাৎ এখানে ছবি তোলা যাবে, কথা রেকর্ড করা যাবে। হোয়াইট হাউসে ঢোকার পাস বা প্রেস কার্ড আছে এমন যে কোন সাংবাদিক এই সংবাদ সম্মেলন কভার করতে পারেন।
ব্রিফিং রুমে সাধারণত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন থাকে। সামনের সারিতে বসেন নিউইয়র্ক টাইমস বা সিএনএনের মতো মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকরা।
প্রেসিডেন্টের কোন অনুষ্ঠানে কোন সাংবাদিকরা যাবেন বা যোগ দেবেন, কে আগে প্রশ্ন করার সুযোগ পাবেন, এসব সাধারণত নির্ধারিত হয় হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস এসোসিয়েশন এবং প্রেসিডেন্টের প্রেস অফিসের মধ্যে আলোচনা-সহযোগিতার মাধ্যমে। এটা বহুদিনে গড়ে উঠা একটা অলিখিত রীতি বা ব্যবস্থা।
ফটোগ্রাফারদের ক্ষেত্রে একটা ট্রাভেল পুল রয়েছে। এ সম্পর্কে জুয়েল বলেন, ‘আমি যে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করি, সেই এএফপিসহ রয়টার্স, এপি এবং নিউইয়র্ক টাইমস এই ট্রাভেল পুলের অংশ। এর মানে হলো, হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের যে কোন অনুষ্ঠান কভার করার ক্ষেত্রে এই চারটি প্রতিষ্ঠান অগ্রাধিকার পাবে। যে কোন লাইনে এই চারটি প্রতিষ্ঠানের পর অন্য সাংবাদিকরা সুযোগ পাবেন।’
হোয়াইট হাউসের কোন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মধ্যে কারা কি প্রশ্ন করতে পারবেন, সেটা কিভাবে নির্ধারিত হয় এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল সামাদ জানান, নিত্যদিনের ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি তার পছন্দমত যে কোন সাংবাদিকের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে তাকে প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে পারেন। তখন সেই সাংবাদিক প্রশ্ন করতে পারেন।
জুয়েল সামাদ বলেন, এখন হোয়াইট হাউসে যে ঘটনাটি ঘিরে তীব্র বিতর্ক চলছে, সেটি ঠিক প্রেস কনফারেন্স নয়, এটাকে বলা হয় প্রেস গ্যাগল। প্রেসিডেন্টের প্রেস সেক্রেটারি বাছাই করা কিছু সাংবাদিককে ডেকে এই ব্রিফিং এর আয়োজন করেন। সেটি অন ক্যামেরা হতে পারে আবার অফ ক্যামেরাও হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, প্রেস গ্যাগল সাধারণত অনানুষ্ঠানিক ব্রিফিং এর মতো। অনেক সময় প্রেসিডেন্ট নিজেও হাজির হন এরকম ব্রিফিংয়ে। তিনি শুরুতেই বলে দেন, আমি এমনিতেই কথা বলতে এসেছি।
কিন্তু সম্প্রতি শুক্রবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিক প্রবেশের অনুমতি পায়। এবার হোয়াইট হাউসে যা ঘটলো, মূলধারার প্রতিষ্ঠানের সাংবাদিকদের যেভাবে একটি ব্রিফিং এ নিষিদ্ধ করা হলো, সেটা আগে কখনো হয়নি।
যেভাবে এখন হোয়াইট হাউসে কিছু সাংবাদিককে কোন কোন ব্রিফিংয়ে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, সেটার কি প্রভাব পড়তে পারে এসব সংবাদ প্রতিষ্ঠানের ওপর এমন প্রশ্নের জবাবে জুয়েল সামাদ বলেন, ‘এটা যত না এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকারক হবে তার চেয়ে বেশি ক্ষতি হবে যুক্তরাষ্ট্রের। কারণ ভালো গণতন্ত্রের জন্য মিডিয়াকে স্বচ্ছভাবে কাজ করতে দেয়া দরকার।’
জুয়েল সামাদ আরো বলেন, হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের কাজ করা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে, সেই সংকট থাকবে না বলেই মনে করেন তিনি। কারণ হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস এসোসিয়েশন একটি শক্তিশালী সংগঠন। তারা একটা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।
টিটিএন/এমএস